ব্যক্তি সমাজকর্মঃ ধারণা, উপাদান, নীতি ও পদ্ধতি
পদ্ধতি কী?
সমাজকর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য পদ্ধতি (Method) প্রত্যয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। গ্রিক শব্দ Meta এবং Hodos শব্দ থেকে Method বা পদ্ধতি শব্দটি উদ্ভূত। Meta শব্দের অর্থ হলো সুশৃঙ্খল এবং Hodos এর অর্থ হলো উপায়। সুতরাং বলা যায় সুশৃঙ্খলভাবে কোনো কাজ করার পন্থা বা উপায় হলো পদ্ধতি।
এইচ. বি ট্রেকারের মতে, পদ্ধতি হলো কোনো লক্ষ্য অর্জনে সচেতন প্রক্রিয়া এবং সুপরিকল্পিত উপায়। বাহ্যিক দিক থেকে এটি কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়া হলেও অভ্যন্তরে রয়েছে সুসমন্বিত জ্ঞান, উপলব্ধি এবং সুনির্দিষ্ট কর্মনীতি।
সুতরাং বলা যায়, কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুশৃঙ্খল জ্ঞান, সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কার্যসম্পাদনের বিশেষ উপায় হলো পদ্ধতি।
সমাজকর্ম পদ্ধতি কী?
পেশাদার সমাজকর্মে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যে সকল কর্মপন্থা বা কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
এইচ.বি ট্রেকার এর মতে, সমাজকর্ম পদ্ধতি হলো সমাজকর্ম অনুশীলনের এমন এক সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান, ধারণা, উপলব্ধি ও নীতির সমষ্টি যা সচেতন বা বাঞ্ছিত উপায়ে তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
আবদুল হাকিম সরকার বলেন, যেসব কর্মপন্থা বা কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা এবং নীতিমালা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী প্রয়োগ করে থাকেন যেসব সুশৃঙ্খল কর্ম প্রক্রিয়ার সমষ্টিই সমাজকর্ম পদ্ধতি।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকর্ম পদ্ধতি হলো সমাজকর্মের সুশৃঙ্খল, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানভিত্তিক স্বীকৃত কর্মপন্থা যা সমাজকর্ম তার পেশাগত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, সমস্যার প্রকৃতি ও ব্যাপ্তি অনুসারে উক্ত সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মে যেসব সুশৃঙখল উপায় বা পন্থা প্রয়োগ করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে।পেশাদার সমাজকর্মে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যে সকল কর্মপন্থা বা কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। পেশাদার সমাজকর্মে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যে সকল কর্মপন্থা বা কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
সমাজকর্ম পদ্ধতির ধরন বা প্রকারভেদ কয়টি?
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা, যাতে সে নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার প্রকৃতি, সম্পদ ও সম্পর্ক এবং পরিবেশ বিবেচনায় সমাজকর্ম পদ্ধতিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ক) মৌলিক পদ্ধতি (সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা মোকাবিলার জন্য সমাজকর্মের যেসকল পদ্ধতি প্রত্যক্ষভাবে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যে সকল পদ্ধতিসমূহকে মৌলিক পদ্ধতি বলা হয়।) ও খ) সহায়ক পদ্ধতি (সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহকে বাস্তবক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ এবং কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে যে পদ্ধতি বিশেষভাবেসাহায্য করে তাই সহায়ক পদ্ধতি।) মৌলিক পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ১) ব্যক্তি সমাজকর্ম ২) দল সমাজকর্ম এবং ৩) সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন। W.A. Friedlander, Brenda Dubois and Karla Krogsrud Miley প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ এই পদ্ধতিকে Community organization (সমষ্টি সংগঠন) হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সমস্যার প্রকৃতি, সম্পদ সঞ্চালনের ধারা ও কর্মপ্রক্রিয়ার ভিত্তিতে এই পদ্ধতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার অস্ট্রেলিয়ায় একে সমষ্টি উন্নয়ন হিসেবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যদিও অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অনেক লেখক এই পদ্ধতিকে সমষ্টি সমাজকর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সমাজকর্মের Classical লেখক ও উপর্যুক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে সমাজকর্মের তৃতীয় মৌলিক পদ্ধতিকে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হলো । অন্যদিকে সহায়ক পদ্ধতিকেও তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন: ১) সমাজকল্যাণ প্রশাসন, ২) সমাজকর্ম গবেষণা এবং ৩) সামাজিক কার্যক্রম।
ব্যক্তি সমাজকর্মের ধারণা/ব্যক্তি সমাজকর্ম কী?
ব্যক্তি সমাজকর্ম সমাজের ক্ষুদ্রতম একক ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করে। ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি মৌলিক পদ্ধতি, যা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা, দক্ষতা ও ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিকে এমনভাবে স্বাবলম্বী করে তোলে যাতে ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যার কার্যকর মোকাবিলা করে সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সামাজিক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। ব্যক্তি সমাজকর্ম মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যা মোকাবিলায় উদ্ভব হয়েছে।
ব্যক্তি সমাজকর্মের ধারণায় এই পদ্ধতিরই উদ্ভাবক ম্যারি ই. রিচমন্ড- বলেন, ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সেই সকল প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা ব্যক্তিকে তার সামাজিক পরিবেশ ও সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে সচেতনভাবে কার্যকর সামঞ্জস্যবিধানের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে।
ওয়ার্নার বোহেমের মতে, ব্যক্তি সমাজকর্ম সমাজকর্মের এমন একটি পদ্ধতি যা ব্যক্তির কার্যসম্পাদন ক্ষমতা উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়ন, পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তির মনো-সামাজিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে। আর এই হস্তক্ষেপ তখনই ঘটে যখন ব্যক্তি বা তার দল ও সমষ্টির কোনো সদস্য মনে করে যে, ব্যক্তির কার্য সম্পাদন ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বা -মকির সম্মুখীন হয়েছে।
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি পদ্ধতি যা ব্যক্তিকে তার নিজস্ব ও সমষ্টির সম্পদের সাহায্যে মনো-সামাজিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলে যাতে ব্যক্তি উন্নততর সামঞ্জস্যবিধান ও স্বাভাবিক সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ইংরেজি নোট এখানেঃ Social Casework Method
ব্যক্তি সমাজকর্মের জনক কে?
Mary Ellen Richmond (1861–1928) was an American social work pioneer. She is regarded as the mother of professional social work along with Jane Addams. She founded social casework, the first method of social work and was herself a Caseworker.
ম্যারি এলেন রিচমন্ড হলেন আমেরিকা সমাজকর্মের অগ্রদূহিতা। জেন এডামসের সাথে তাকেও সমাজকর্মের মা ডাকা হয়। তাকে অবশ্য ব্যক্তি সমাজকর্মের অগ্রদূহিতা/জননী/জনক ধরা হয়। তার বিখ্যাত দুটো বই হলো:
Social Diagnosis (1917), New York: Russell Sage Foundation
What is social casework? An introductory description (1922), New York: Russell Sage Foundation
ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান কয়টি?
ব্যক্তি সমাজকর্ম কতগুলো অপরিহার্য বিষয়কেন্দ্রিক আবর্তিত সাহায্যপ্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়ায় যে সকল বিষয় অপরিহার্য তাই ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান। ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদানসমূহ চিহ্নিত করতে গিয়ে এইচ. এইচ. পার্লম্যান বলেন- “A Person with a Problem comes to a Place where a Professional Representative helps him by a given Process”। আর এটি বিশ্লেষণ করলে ব্যক্তি সমাজকর্মের পাঁচটি উপাদান পাওয়া যায়। যেমন :
১। Person (ব্যক্তি); ক্লায়েণ্ট বা সাহায্যার্থী
২। Problem (সমস্যা); আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা
৩। Place (স্থান); সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান
৪। Professional Representative (পেশাদার প্রতিনিধি); সমাজকর্মী
৫। Process (প্রক্রিয়া); সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া।
Helen Harris Perlman ১৯৫৭ সালে Social Casework: A Problem-Solving Process বা ব্যক্তি সমাজকর্ম বইটি লিখেন যা সমাজকর্মের মৌলিক বই হিসেবে বিবেচিত হয়।
নিচে ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো :
১। ব্যক্তি : ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল উপাদান হলো ব্যক্তি। যাকে কেন্দ্র করে মূলত ব্যক্তি সমাজকর্ম পরিচালিত হয়। পেশাগতভাবে ব্যক্তি হলো ক্লায়েণ্ট বা সাহায্যার্থী। তবে ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তি বা ক্লায়েণ্ট বা সাহায্যার্থী বলা যাবে এমন
ব্যক্তিকে যার মধ্যে নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকে।
ক. সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক বা আর্থিক সমস্যাগ্রস্ত যে কোনো বয়সের ব্যক্তি;
খ. যখন ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টায় সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় এবং সমস্যা মোকাবিলায় অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়;
গ. ব্যক্তি নিজে বা তার পরিবার বা সমাজের যে কোনো সদস্য এই সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সমাজকর্মীর সাহায্য কামনা করে।
এ প্রসঙ্গে এইচ. এইচ. পার্লম্যান বলেন, ব্যক্তিটি হলেন একজন পুরুষ, মহিলা বা শিশু যে কেউ, যে মনে করে বা যার সম্পর্কে মনে করা হয় যে, তার সামাজিক বা আবেগীয় ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন। তা হতে পারে দৃশ্যমান, হতে পারে পরামর্শমূলক। যখন ব্যক্তি এ ধরনের সাহায্য নিতে শুরু করে তখন তাকে ক্লায়েণ্ট বা সাহায্যার্থী বলা হয়।
২। সমস্যা : ব্যক্তি সমাজকর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সমস্যা। সমস্যা হলো ব্যক্তির অস্বাভাবিক আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক অবস্থা, যা ব্যক্তিকে তার স্বাভাবিক ভূমিকা পালনে বাধা সৃষ্টি করে সামগ্রিক জীবনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। আর এ অবস্থা থেকে ব্যক্তি পরিত্রাণ পেতে চায়। ব্যক্তির এ সমস্যা দুধরনের হতে পারে। যথা :
ক. ব্যক্তির চাহিদার অপূরণজনিত সমস্যা। যেমন: শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ও আর্থিক সমস্যা, যা ব্যক্তির স্বচ্ছল জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করে।
খ. বিভিন্ন চাপমূলক অবস্থার ফলে সৃষ্ট সমস্যা। যেমন: অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক বিচ্ছিনতা ও সামঞ্জস্যহীনতা, আন্তব্যক্তিক ও আন্তপারিবারিক দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিত্বের প্রতিবন্ধকতা বা আচরণগত সমস্যা যা ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে অকার্যকর করে তোলে।
৩। স্থান : ব্যক্তি সমাজকর্মের সেবাদান প্রক্রিয়া একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরিচালিত হয়। সমাজকর্মের পরিভাষায় একে বলা হয় স্থান বা social work agency। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান হলো একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তির সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও অবস্তুগতসেবা প্রদান করে থাকে। ব্যক্তি সমাজকর্মের সেবাদান প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মুখ্য সামাজিক ও গৌণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান।
৪। পেশাদার প্রতিনিধি : ব্যক্তি সমাজকর্মের সামগ্রিক কার্যক্রম, যার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাকেই পেশাদার প্রতিনিধি বলা হয়। পেশাদার প্রতিনিধি সমাজকর্মী হিসেবে অধিক পরিচিত। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত পেশাদার ব্যক্তিকে ব্যক্তি সমাজকর্মী বলা হয়। যিনি ব্যক্তি সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা এবং কলাকৌশল সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত থাকেন। এছাড়া তিনি ব্যক্তি সমাজকর্মী প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, নীতি, কর্মসূচি, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং ব্যক্তি সমাজকর্মের জ্ঞান, দর্শন, দক্ষতা, কৌশল প্রয়োগে দক্ষ তিনি ব্যক্তির সমাধানে সমাজকর্মের নৈতিক মানদ- অনুসরণ করে থাকেন।
৫। প্রক্রিয়া : ব্যক্তি সমাজকর্মের সর্বশেষ উপাদান হলো প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তি সমাজকর্মের সামগ্রিক সেবা কার্যক্রমকে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়া হলো সাহায্যার্থীকে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করার জন্য কতগুলো পর্যায়ক্রমিক কার্যক্রমের সমষ্টি। আর এ কার্যক্রম পাঁচটি স্তরে সম্পন্ন হয়। যথা: ক) মনো-সামাজিক অনুধ্যান, খ) সমস্যা নির্ণয়, গ) সমাধান, ঘ) মূল্যায়ন এবং ঙ) অনুসরণ। এ স্তরগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজকর্মীর সাথে সাহায্যার্থীর পেশাগত সম্পর্ক সৃষ্টি হতে শুরু করে সমস্যা নির্ণয়, সমাধান ব্যবস্থায় বস্তুগত ও অবস্তুগত সেবা সবকিছুই পর্যায়ক্রমিক ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়।
সমাজকর্ম পেশায় ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাই ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি । ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া যাদেরকে বা যে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় তাকে বলা হয় ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান। ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান পাঁচটি। যথা: ক) ব্যক্তি, খ) সমস্যা, গ) স্থান বা প্রতিষ্ঠান, ঘ) পেশাদার প্রতিনিধি বা সমাজকর্মী এবং ঙ) সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া।
ব্যক্তি সমাজকর্মের সাধারণ নীতি কয়টি?
ব্যক্তি সমাজকর্ম সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে সমাজকর্মীকে কতগুলো নীতি মেনে চলতে হয়, যা ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিমালা হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী সাতটি নীতিমালা অনুসরণ করে সমাজকর্ম অনুশীলন করে থাকে। যথা: ক) গ্রহণ নীতি, খ) যোগাযোগ নীতি, গ) অংশগ্রহণ নীতি, ঘ) গোপণীয়তার নীতি, ঙ) ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি, চ) আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি এবং ছ) আত্মসচেতনতার নীতি।
ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের এক গতিশীল সেবাদান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী সেবাদানের কতিপয় নির্দেশনামূলক নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যক্তি সমাজকর্ম অনুশীলন করে থাকেন। নিচে ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. গ্রহণ নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মে গ্রহণ নীতি বলতে বোঝায় সাহায্যার্থীকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তাকে সম্মান প্রদর্শন, ব্যক্তি মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, সমস্যার যথাযথ মূল্যায়ন এবং তার প্রতি সেবাদানের সদিচ্ছা নির্দেশ করে সমাজকর্মী কর্তৃক তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি সমাজকর্মের সফলতা অনেকাংশেই গ্রহণনীতির উপর নির্ভরশীল।
তাই গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্মীর মধ্যে আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, মনোযোগ, আগ্রহ, সততা, অন্যের অনুভূতিকে ভাগাভাগি করে নেয়ার সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটি যেহেতু একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া তাই এক্ষেত্রে সমাজকর্মী ও ব্যক্তি উভয়েরই প্রতিক্রিয়া আবশ্যক।
২. যোগাযোগ নীতি : সাধারণভাবে যোগাযোগ বলতে তথ্যের আদানপ্রদানকে বোঝানো হয়। সমাজকর্মে যোগাযোগ বলতে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে সমস্যা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা, অনুভূতির আদানপ্রদানকে বোঝায়। ব্যক্তি সমাজকর্মে যোগাযোগ নীতি অনুসরণের ফলে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী একে অপরের বক্তব্য, অভিব্যক্তি এবং প্রতীকী আচরণের অন্তর্নিহিত বিষয় উপলব্ধি করতে পারে।
৩. অংশগ্রহণ নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে তার সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এক্ষেত্রে সমাধান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক। ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং হারানো ক্ষমতার পুনরুদ্ধার ও সুসংহতকরণের মাধ্যমে তার ভূমিকাকে সচল করে তোলার লক্ষ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। এছাড়া সাহায্যার্থীর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে সক্রিয় অংশগ্রহণ সহায়তা করে। আবার সমস্যাটি যেহেতু ব্যক্তির নিজের তাই তা সমাধানের বিষয়টি সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়েরই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৪. গোপণীয়তার নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো সাহায্যার্থীর বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা। ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ব্যক্তি, তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী বা সহকর্মী বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যক্তির বিভিন্ন গোপণীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার সমস্যার যথাযথ সমাধান যেমন প্রত্যাশা করে, তেমনি প্রদেয় তথ্য যাতে গোপণ রাখা হয় সেটিও দৃঢ়ভাবে কামনা করে।
৫. ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি : সমাজকর্মের দৃষ্টিকোন থেকে প্রত্যেকটি মানুষ একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা। ক্ষমতা, বুদ্ধি, আবেগ, অনুভূতি, যোগ্যতা, সামর্থ্য ইত্যাদি অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা আলাদা। যার ফলে ব্যক্তির সক্ষমতা, দুর্বলতা, উপযোজন ক্ষমতা, সমস্যা সম্পর্কে অনুভূতি ও ধারণা একে অন্যের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে আলাদা ও স্বতন্ত্র বিবেচনায় এনে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তি সমাজকর্ম সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৬. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের এই নীতিটি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ- অপছন্দ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে নির্দেশ করে। সমাজকর্ম যেহেতু একটি অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম সেহেতু ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থী তার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তা-চেতনা, সমাধান ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার মতামত প্রদান করে থাকে এবং তার মতামতকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ মূল্যায়নও করা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সাহায্যর্থীকে যথাযথভাবে সহায়তা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
৭. আত্মসচেতনতার নীতি : সমাজকর্মের এই নীতিটি শুধুমাত্র ব্যক্তি সমাজকর্মীর জন্য প্রযোজ্য। এই নীতিটি মূলত সমাজকর্মীর নিজস্ব সফলতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়াকে নির্দেশ করে। একজন মানুষ হিসেবে সমাজকর্মীর মধ্যে আবেগ, হিংসা, দ্বেষ, পক্ষপাতিত্ব, পছন্দ ও অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে ব্রতী হতে এ নীতি সহায়তা করে। একজন সমাজকর্মীকে কতগুলোা বিষয়ে সচেতন হতে হয়। যেমনÑ ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা; চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি যত্নবান হওয়া; সাহায্যার্থীর মর্যাদাহানির আচরণ থেকে বিরত থাকা এবং ব্যক্তিগত বদ অভ্যাস ও কাজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
ইংরেজি নোট এখানেঃ Social Casework Method
ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া (Problem Solving Process in Social Case Work)
ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যে সব পন্থা বা কৌশল প্রয়োগ করা হয় তাকে প্রক্রিয়া বলে। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠান বা সমাজকর্মীর নিকট সাহায্য প্রার্থনা হতে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়, এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া একটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কতগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রত্যেকটি ধাপে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় প্রধানত যেসকল ধাপ বা স্তর অনুসরণ করা হয় সেগুলো হলো: ক) মনো-সামাজিক অনুধ্যান, খ) সমস্যা নির্ণয়, গ) সমাধান ব্যবস্থা, ঘ) মূল্যায়ন ও ঙ) অনুসরণ । এছাড়া, সহায়ক ধাপগুলো হলো: ক) অন্তরবর্তীকালীন ব্যবস্থা, ও খ) প্রেরণ।
ক্লায়েন্টের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯১৭ সালে মেরি রিচমন্ড দ্বারা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করেন। ক) গ্রহণ; খ) অধ্যয়ন; গ) রোগ নির্ণয়, ও ঘ) চিকিৎসা। এছাড়া, হোসাইন ও আলাউদ্দিন (১৯৭০) পাঁচটি ধাপের কথা উল্লেখ করেন যথাঃ ক) মনো-সামাজিক অনুধ্যান, খ) সমস্যা নির্ণয়, গ) সমাধান ব্যবস্থা, ঘ) মূল্যায়ন ও ঙ) অনুসরণ।
তবে, ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল উপাদান চারটি যথাঃ তথ্য সংগ্রহ, সমস্যা নির্ণয়, সমস্যা সমাধান, ও মূল্যায়ণ।
ক) মনো-সামাজিক অনুধ্যান : ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো সাহায্যার্থীর সমস্যার যথাযথ অনুধ্যান। মনো-সামাজিক অনুধ্যান হচ্ছে ব্যক্তির মানসিক ও সামাজিক সমস্যার স্বরূপ নির্ণয়ের পাশাপাশি সেগুলোর যথাযথ সমাধান পরিকল্পনা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কৌশল। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর যেসব বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে হয় তা হলো :
প্রথমত : সাহায্যার্থী যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা কীরূপ এবং এক্ষেত্রে সাহায্যার্থী কী চায় বা তার উদ্দেশ্য কী?
দ্বিতীয়ত : মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও তার পরিবারের উপর সমস্যা কীরূপ প্রভাব ফেলছে?
তৃতীয়ত : কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে এবং সমস্যাকে ত্বরান্বিত করতে কোন বিষয়টি কাজ করছে?
চতুর্থত : সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা কী এবং ব্যক্তির নিজস্ব কী ধরনের সম্পদ রয়েছে?
পঞ্চমত : সাহায্যার্থীর এজেন্সিতে আসার উদ্দেশ্য কী এবং এজেন্সির কী ধরনের সম্পদ রয়েছে?
খ) সমস্যা নির্ণয় : এ পর্যায়ে মনো-সামাজিক অনুধ্যানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাবলীর আলোকে সাহায্যার্থীর সমস্যার স্বরূপ ও প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা নির্ণয় হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সাহায্যার্থীর সমস্যা সম্পর্কিত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ব্যক্তির সমস্যা, সামাজিক অবস্থা এবং ব্যক্তি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যা সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে। সমস্যা নির্ণয় কর্মপ্রয়াসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১) গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া, ২) চিকিৎসামূলক সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া এবং ৩) সমস্যার উৎপত্তি সংক্রান্ত সমস্যা নির্ণয় সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ।
গ) সমাধান ব্যবস্থা: এ পর্যায়ে ব্যক্তি ও তার পরিবারের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা গৃহীত হয়। অর্থাৎ সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের পর প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে সমস্যার সমাধান পরিকাল্পনা গৃহীত হয়।
ব্যক্তি
সমাজকর্মে সমাধান পরিকল্পনা এমন একটি স্তর যেখানে একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর আওতায় ব্যক্তি
ও তার পরিবারকে সক্ষম করার জন্য প্রচেষ্টা গৃহীত হয়, যাতে তারা (সাহায্যার্থী ও তার
পরিবার) সামাজিক ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রগুলোর সাথে ভালোভাবে উপযোজন করতে পারে। সাধারণত
তিনটি পদ্ধতিতে ব্যক্তি সমাজকর্মের সমাধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। যথা:
১. সমর্থনমূলক
সমাধান পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা মোকাবিলায় সামঞ্জস্যবিধান ও
সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়নে সহায়তা করা হয়। এতে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ
ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহারে সহায়তা করা হয়।
২. সংশোধনমূলক
সমাধান পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে সাহায্যার্থীর আচরণের বাহ্যিক ধরন এবং অভ্যন্তরীণ নির্দিষ্ট
প্রক্রিয়ার মধ্যে সংশোধন আনয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো সাহায্যার্থীর
আচরণ ও মনোভাবের মধ্যে সংশোধন আনয়ন।
৩. বস্তুগত
সাহায্যদান পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী বৈষয়িক
সাহায্য প্রদান করা হয়। অর্থাৎ সাহায্যার্থীর সামঞ্জস্যবিধান ও সামাজিক ভূমিকা পালনের
ক্ষেত্রে যদি কোনো বস্তুগত সাহায্যের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
ঘ) মূল্যায়ন: ব্যক্তি সমাজকর্মের অন্যতম ধাপ হলো মূল্যায়ন, যার মাধ্যমে গৃহীত কার্যক্রমের সফলতা
ও ব্যর্থতা পরিমাপ করা যায়। এটি মূলত সমস্যা সমাধানের একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া,
যা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার শুরু হতে শেষ অবধি চলমান। মূল্যায়ন সাধারণত দু’ভাগে করা
হয়ে থাকে। যথা :
১. ক্রমাগত
মূল্যায়ন : সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ অবধি মূল্যয়ন চলতে
থাকে।
২. মেয়াদী
মূল্যায়ন : সেবাদানের নির্দিষ্ট মেয়াদে এ মূল্যায়ন করা হয়। এতে উদ্দেশ্য অর্জনের সাফল্য
ও ব্যর্থতা যাচাই করা যায়। মূল্যায়নের প্রেক্ষিতেই সমস্যা সমাধান ব্যবস্থার পরিসমাপ্তি
ঘটে।
ঙ) অনুসরণঃ এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি সমাজকর্মী তার ক্লায়েন্ট বা সাহায্যার্থী সম্পর্কে বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও উন্নতি নিয়ে তথ্য নিয়ে থাকে। এই সময় সাহায্যার্থী অন্য কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কীনা সেটা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে অবস্থা বুজে অনেকসময় ব্যক্তিকে অন্য কোন সমাজকর্মীর কাছে প্রেরণ করা হয়। (The follow up process is to be done to help the client to maintain the improvements and to get information about the client and his problem. During follow up the client is helped to discuss the problem which he is still facing. Sometimes, the caseworker refers the client to another colleagues or professionals.)
ইংরেজি নোট এখানেঃ Social Casework Method
র্যাপো কী (Rapport)
ব্যক্তির মনো-সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে ব্যক্তি সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যার গতি-প্রকৃতি, ধরন, কারণ ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান প্রদানে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়া আবশ্যক। সমাজকর্মের পরিভাষায় এই সম্পর্ককে বলা হয় র্যাপো।
Rapport একটি ফারসি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক। ব্যক্তি সমাজকর্মে র্যাপো শব্দটি সর্বপ্রথম Miss Virginia Robinson তাঁর A Changing Psychology in Social Case Work গ্রন্থে ১৯৩০ সালে ব্যবহার করেন। সাধারণভাবে ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে যে গভীর, আন্তরিক, সহানুভূতিপূর্ণ পেশাগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাই হলো র্যাপো বা পেশাগত সম্পর্ক।
Felix P. Biestek তাঁর The Case Work Relationship (১৯৫৭) গ্রন্থে বলেন, সাহায্যার্থী তার নিজের ও পরিবেশের মধ্যকার উন্নত সামঞ্জস্যবিধান ক্ষমতার্জনে সহায়তা করার লক্ষ্যে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মনোভাব এবং আবেগের গতিশীল আন্তঃক্রিয়াই হচ্ছে ব্যক্তি সমাজকর্মের পেশাগত সম্পর্ক।
সুতরাং সাহায্যার্থীর সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে পেশাগত মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্যকে অক্ষুন্ন রেখে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে যে আন্তরিক পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার সাহায্যে মানবীয় সম্পর্ক সংক্রান্ত জ্ঞানের কার্যকর প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাই হলো র্যাপো বা পেশাগত সম্পর্ক।
ব্যক্তি সমাজকর্মে র্যাপোর গুরুত্ব
ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সাহায্যার্থী সম্পর্কে সঠিক ও কার্যকরী তথ্য উদঘাটন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলপ্রসূ সমস্যা সমাধান কৌশল উদ্ভাবনে র্যাপো একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে কাজ করে। সম্পর্ক স্থাপনের এ দ্বিমুখী প্রক্রিয়ায় একদিকে সাহায্যার্থী তার জটিল মনো-সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রত্যাশায়; অন্যদিকে সমাজকর্মী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপনে ব্রতী হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মের বিভিন্ন ক্ষেত্রে র্যাপোর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. সাহায্যার্থীর সমস্যার স্বরূপ নির্ণয় : র্যাপো’র মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত হয়ে ব্যক্তির সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে স্বাভাবিক সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়নে সহায়তা করা সম্ভব হয়।
২. সাহায্যার্থীর পারিপার্শিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা লাভের মাধ্যমে সেগুলোকে ব্যক্তির অনুকূলে আনতে র্যাপো কার্যকরী তথ্য প্রদান ও যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করে থাকে।
৩. সাহায্যার্থীর মানসিক পীড়ন হতে মুক্তি : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে মানসিক চাপমূলক অবস্থা হতে মুক্ত করার ক্ষেত্রে র্যাপো বিশেষ ভূমিকা রাখে। কেননা পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি দ্বিধাহীনভাবে তার সমস্যা সম্পর্কে সমাজকর্মীকে অবহিত করতে পারে। এর ফলে ব্যক্তির মানসিক পীড়ন অনেকখানি নিরসন করা সম্ভব হয়।
৪. সাহায্যার্থীর আত্মমূল্যায়ন : র্যাপো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি যখন তার সমস্যা সম্পর্কে সমাজকর্মীকে অবগত করে তখন সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় যেমনÑ সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা, ভূমিকা এবং এক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা, পরাজয় বা অপরাধবোধ সবকিছুই সে তার বিচারবোধ দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারে।
৫. সাহায্যার্থীর আচরণে পরিবর্তন আনয়ন : ব্যক্তির মনো-সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে র্যাপো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও আচরণ, মনোভাব দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনয়নে র্যাপো কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৬. ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করতে র্যাপো সহায়তা করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা ও প্রতিভার বিকাশ সাধন এবং নিজস্ব সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান নির্দেশে র্যাপোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৭. সমাজকর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি : কার্যকর ও ফলপ্রসূ র্যাপো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজকর্মীর দক্ষতা ও গুণাবলী বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এটি সমাজকর্মীর পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৮. সাহায্যার্থীর সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার সমস্যাকে যথাযথভাবে অনুধাবন, বিশ্লেষণ, স্বরূপ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে যথাযথ সমাধান কৌশল প্রয়োগ করে ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নে র্যাপোর গুরুত্ব অপরিসীম।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মনো-সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে উদ্ভব হয়েছে ব্যক্তি সমাজকর্মের। এক্ষেত্রে ব্যক্তির সমস্যার ধরন, কারণ, প্রকৃতি ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে যথাযথ সমাধান প্রদানে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি। কেননা কেবল পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হলেই সাহায্যার্থী অবলীলায় তার সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যাদি সমাজকর্মীর নিকট বলতে পারে। সমাজকর্মের ভাষায় এই পেশাগত সম্পর্কের নাম র্যাপো।
র্যাপোর উদ্দেশ্য হলো সাহায্যার্থীর সমস্যা সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যাদি সংগ্রহ করে সমস্যার যথাযথ কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমস্যার যথোপযোগী সমাধান ব্যবস্থা নির্দেশ করে ব্যক্তিকে তার হারানো সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারে যথাযথভাবে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করা।
ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্র (Fields of Social Case Work)
সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গতিশীল ও অর্থবহ পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার করাই ব্যক্তি সমাজকর্মের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পদ ও উদ্দেশ্যের আলোকে সাহায্যার্থীর সমস্যার ধরন ও গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকে। নিচে ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. চিকিৎসা সমাজকর্ম : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্যক্তি সমাজকর্মের বাস্তব প্রয়োগের সূচনা হয় চিকিৎসা সমাজকর্মের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে যা হাসপাতাল সমাজসেবা নামে পরিচিত। হাসপাতালে আগত রোগীদের মানসিক যন্ত্রণা লাঘব, রোগ মুক্তির পর পূনর্বাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি এ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
২. বিদ্যালয় সমাজকর্ম : ব্যক্তি সমাজকর্মের দর্শন, কৌশল ও নীতিমালা প্রয়োগ করে শিশুদের অকারণ ভয়-ভীতি দূর করে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। তাছাড়া যারা বিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যবিধান করতে পারেনা তাদের সামঞ্জস্যবিধানে সহায়তা করা হয়।
৩. পরিবার ও শিশুকল্যাণ : পারিবারিক ভাঙ্গন, বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব, সহিংসতা ইত্যাদি রোধে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়। একটি সুশৃঙ্খল পারিবারিক পরিবেশ শিশুর একান্ত কাম্য। এক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে ব্যক্তি সমাজকর্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৪. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাস্ফীতি রোধ : জনসংখ্যাস্ফীতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল, পরিকল্পিত উপায়ে ছোট পরিবার গঠনের উপকারিতা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টির উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৫. সংশোধনমূলক কার্যক্রম : সংশোধনমূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে শারীরিক শাস্তি প্রদান না করে সংশোধন ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাধীর আচরণে পরিবর্তন আনয়ন। অপরাধীদের আচরণ পরিবর্তনে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে শিশু ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য প্রবেশন, জাতীয় কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
৬. যুব অসন্তোষ দূরীকরণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যুব অসন্তোষ একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। কেননা বেকারত্ব, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ও দ্বন্দ্ব, মাদকাসক্তি, হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, রাজনৈতিক কলহ ইত্যাদি কারণে যুবসমাজ হতাশাগ্রস্তহয়ে নানাবিধ অনৈতিক, অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আর এসকল সমস্যা থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে ও মোকাবিলায় ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৭. মানসিক রোগীদের চিকিৎসা : দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে সামাজিক সামঞ্জস্যবিধানে সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
৮. প্রবীণকল্যাণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রবীণদের সংখ্যা ও তাদের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, অবসরকালীন নানা সমস্যার সমাধান করে পরিবার ও সমাজে তাদের যথাযথ পুনর্বাসন করা যেতে পারে।
৯. মাদকাসক্তি নিরাময় : বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় যুবসমাজ দিন দিন মাদকের শিকারে পরিণত হয়ে তাদের কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। যুক্ত হচ্ছে অনৈতিক, অসামাজিক, অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে এ শ্রেণিকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করে সমাজে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
১০. নারী উন্নয়ন : বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু বিশাল এ জনসংখ্যা পরিবার ও সমাজে তাদের স্বাভাবিক ভূমিকা পালন করতে পারেনা। পারিবারিক ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা ও নিগৃহের কারণে তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক নানাদিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। সুতরাং মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ ক্ষমতায়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর যথাযথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তুলতে ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অর্থবহ পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান ব্যবস্থা নির্দেশ করে ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারই ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যে সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো: ১) চিকিৎসা সমাজকর্ম ২) বিদ্যালয় সমাজকর্ম, ৩) শিশু ও পরিবারকল্যাণ, ৪) পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাস্ফীতি রোধ, ৫) সংশোধনমূলক কার্যক্রম, ৬) যুব অসন্তোষ দূরীকরণ, ৭) মানসিক রোগীদের চিকিৎসা, ৮) প্রবীণকল্যাণ, ৯) মাদকাসক্তি নিরাময়, ১০) নারী উন্নয়ন ইত্যাদি।