গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা ও গর্ভকালীন জটিলতা

গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিল সমস্যা

১. গর্ভপাত

২. প্রি-এক্লাম্পশিয়া

৩. এক্লাম্পশিয়া

৪. ফিস্টুলা

৫. পেরিনিয়াম ছিঁড়ে যাওয়া


Complexities related to Pregnancy

১) গর্ভপাত

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সময়ে রক্তপাত হতে পারে। পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করলে প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস ও শেষের তিন মাসের যে কোন সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যদি কোনো কারণে গর্ভস্থ ভ্রূণ আটাশ সপ্তাহ বা সাত মাসের পূর্বে মাতৃজঠর বা জরায়ু থেকে বের হয়ে যায় তবে তাকে গর্ভপাত বা এ্যাবরশন বলে৷


কারণ গর্ভপাতের কারণগুলোকে মোটামুটি দুভাগে ভাগ করা যায়-

১. ভ্রুণের অস্বাভাবিকতা বা ক্রমোজমের ত্রুটি

২. গর্ভবতী মায়ের শরীরের নানা ত্রুটির জন্য গর্ভপাতের আশংকা থাকে৷ যেমন-

* গর্ভবতীর যদি গর্ভাবস্থায় খুব জ্বর হয় এবং তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে উঠে যায়৷

* গর্ভবতীর যদি গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যায়৷

* গর্ভবতীর যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং তা যদি পূর্বে শনাক্ত করা না হয়ে থাকে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকে৷

* গর্ভবতীর যদি কিডনীর অসুখ (নেফ্রোটিক সিনড্রোম) থাকে৷

* গর্ভবতী যদি গর্ভাবস্থায় হাম রোগে আক্রান্ত হয়৷

* গর্ভবতী যদি গর্ভাবস্থায় কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়৷

* থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে৷

* জরায়ুর টিউমার বা জরায়ুর গঠনগত কোনও ত্রুটি থাকলে৷

* জরায়ুতে গর্ভফুল বা প্ল্যাসেন্টা যদি খুব নিচে নেমে আসে তাহলেও বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে৷

* আগের গর্ভাবস্থা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভপাত করানো হয়৷

* মায়ের শরীরে প্রোজেস্টেরোন হরমোন কম থাকার কারণে গর্ভপাত হতে পারে৷

* গর্ভবতী যদি অত্যধিক মদ্যপান বা ধূমপানে আসক্ত হন তবে গর্ভপাত হতে পারে৷

* গর্ভবতী যদি প্রবল মানসিক পীড়ণে থাকেন বা চরম শোক দুঃখ পান তাহলে গর্ভপাত হতে পারে৷

* গর্ভাবস্থায় পেটে আঘাত পেলে, অত্যধিক পরিশ্রম, বাস বা ট্রেনে অনেক দূরে যাতায়াত করলে গর্ভপাত হতে পারে৷


গর্ভপাতের শ্রেণীবিভাগ ও গর্ভপাতের লক্ষণ: 


থ্রেটেন্ড গর্ভপাত

* কয়েকমাস মাসিক (পিরিয়ড) বন্ধ থাকবে৷

* রক্তস্রাব অল্প সামান্য হতে পারে৷

* পেটের ব্যথা নাও থাকতে পারে, থাকলেও খুব অল্প, কোমর বা তলপেটে সামান্য ব্যথা থাকতে পারে৷

* প্রসবদ্বার দিয়ে ভ্রুণ, তার আস্তরণ ও ফুল বেরিয়ে আসবে না৷

* জরায়ুর মুখ বন্ধ থাকবে (ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝবেন)৷


অসম্পূর্ণ গর্ভপাত

* কয়েকমাস মাসিক (পিরিয়ড) বন্ধ থাকবে৷

* রক্তস্রাব অনেকদিন একইভাবে হতে পারে৷

* পেটে ব্যথা থাকতে পারে নাও পারে৷

* প্রসবদ্বার দিয়ে ভ্রূণ, তার আস্তরণ ও ফুল বেরিয়ে আসবে৷

* জরায়ুর মুখ খোলা থাকবে (ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝবেন)৷


জীবাণুদুষ্ট গর্ভপাত

* কয়েকমাস মাসিক (পিরিয়ড) বন্ধ থাকবে৷

* কট গন্ধযুক্ত রক্ত স্রাব হতে পারে৷

* প্রথমদিকে পেটে ব্যথা না হলেও পরে তলপেটে খুব ব্যথা হবে৷

* প্রসবদ্বার দিয়ে ভ্রূণ, তার আস্তরণ ও ফুল বেরিয়ে আসতেও পারে নাও পারে৷

* জরায়ুর মুখ খোলা বা বন্ধ থাকতে পারে (ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝবেন)৷

* শীত করে এবং কঁাপিয়ে জ্বর আসতে পারে৷

* রক্ত চাপ কমে যায়৷

* অত্যধিক রক্ত ক্ষরণের কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে৷ রোগী ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে৷


মিস্ড গর্ভপাত

* কয়েকমাস মাসিক (পিরিয়ড) বন্ধ থাকবে৷

* প্রসবদ্বার দিয়ে ভ্রূণ, তার আস্তরণ ও ফুল বেরিয়ে আসবে না৷

* পেটে ব্যথা থাকবে না৷

* জরায়ুর মুখ সাধারণত বন্ধ থাকবে (ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝবেন)৷

* রক্তস্রাব হবে না, সামান্য বাদামি দাগ লাগতে পারে৷


ইনএভিটেবল গর্ভপাত

* কয়েকমাস মাসিক (পিরিয়ড) বন্ধ থাকবে৷

* খুব বেশি পরিমাণে রক্তস্রাব হবে৷

* তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা৷

* প্রসবদ্বার দিয়ে ভ্রুণ, তার আস্তরণ ও ফুল বেরিয়ে আসবে না৷

* জরায়ুর মুখ খোলা থাকবে (ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝবেন)৷


পরামর্শ

* কমপক্ষে একমাস বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত৷

* বাড়ির হালকা কাজকর্ম করা যেতে পারে৷

* একমাস স্বামী-সহবাস করা যাবে না৷

* পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার আগে চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিতে হবে৷


প্রতিরোধ

* সন্তান সম্ভাব হলেই চিকিত্‌সককেরকাছে পূর্বের সকল ইতিহাস খুলে বলতে হবে৷

* নিয়মিত চেকআপ জরুরি৷

* সন্তান সম্ভাব হওয়ার প্রথম দিকে রিকশা, বাস, ট্রাম, ট্রেন ইত্যাদির ঝঁাকুনি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত৷

* টিউবয়েল পাম্প করা, পানি ভর্তি ভারী বালতি তোলা, বাচ্চা কোলে নেওয়া ঠিক নয়৷

* ছোঁয়াচে অসুখ থেকে গর্ভবতী মাকে দূরে রাখতে হবে৷

* দোকান বা হোটেলের খাবার না খাওয়াই ভালো৷

* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে৷  [1]


২) প্রি-একলাম্পশিয়া

প্রি-একলাম্পশিয়া গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ অর্থাত্‌ ৫ মাস পর থেকে দেখা দেয়৷


কারণ

* একবার প্রি-একলাম্পশিয়া হলে

* প্রি-একলাম্পশিয়া পরিবারে কারো হলে

* পরিবারে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে

* যাঁরা বেশি বয়সে মা হন তাদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে


লক্ষণ

* রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া৷ রক্তচাপ সাধারণত ১৪০/ঌ০ (মিলিমিটার) এর বেশি থাকে

* প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন (আমিষ) জাতীয় পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া

* হাত-পায়ে পানি আসা

* অনিদ্রা

* চোখে ঝাপসা দেখা

* উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং নেফ্রাইটিস রোগীদের

* অসহ্য মাথা ব্যথা

* খিঁচুনি

*অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে (প্রসবের সময়, আগে এবং পরে)

*প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া

*বার বার বমি

*পেটের উপর দিকে অসহ্য ব্যথা

*শরীরে ওজন বাড়তে থাকে

* পেটে ব্যথা

* প্রি-একলাম্পসিয়া হওয়ার শুরুতেই শরীরে ওজন বাড়তে থাকে

* সপ্তাহে আধা কেজি ওজন বৃদ্ধি পায়


চিকিৎসা

* প্রি-একলাম্পশিয়া আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত চেকআপ করানো দরকার

* খাবারের সঙ্গে আলাদা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে

* প্রোটিন এবং ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে হবে

* পুষ্টিকর নরম খাবার খেতে হবে

* রাতে গড়ে ৮ ঘণ্টা এবং দিনে ২ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে

* পা ফুলে গেলে পা দুটো বালিশের উপর উঁচু করে রেখে ঘুমাতে হবে

* ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ এবং প্রেসারের ওষুধ খেতে হবে

* রক্তচাপ, ওজনের চার্ট তৈরি করতে হবে

* প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাচ্ছে কি না তার চার্ট করতে হবে

* বাচ্চার অবস্থাও বারবার দেখতে হবে

* প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে


সঠিক সময়ে চিকিত্‌সা না করালে নিম্নলিখিত সমস্যা হতে পারে 


মায়ের সমস্যা

* প্রস্রাব না হওয়া অথবা অল্প হওয়া

* চোখে কম দেখা এমনকি অন্ধ হয়ে যাওয়া

* বাচ্চা প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া

* একলাম্পশিয়া বা খিঁচুনি হওয়া


শিশুর সমস্যা

* বাচ্চা মাতৃগর্ভে মারা যেতে পারে

* বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিকমত হবে না

* জণ্মের সময় শ্বাসকষ্ট হবে


প্রতিরোধ

* গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেক-আপের ব্যবস্থা করা

* গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা

প্রসবপূর্ব চেক-আপের সময় শারীরিক ওজন ও রক্তচাপ, পায়ে পানি আসে কিনা, প্রস্রাবে এলবুমিন যায় কিনা এগুলো পরীক্ষা করা উচিত৷


ল্যাব পরীক্ষা

* প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা

* ২৪ ঘণ্টায় প্রস্রাবের প্রোটিন পরীক্ষা

* রক্তে ইউরিয়া, ইউরিক এ্যাসিড এবং ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ দেখা

* এসজিপিটি পরীক্ষা

* পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে বাচ্চার অবস্থা দেখা৷  [1]


৩) একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন খিঁচুনি

এক্লাম্পশিয়া মূলত প্রি-এক্লাম্পশিয়ার গুরুতর অবস্থা৷ গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন খিঁচুনী। নবজাতকের মৃত্যুরও অন্যতম কারণ একলাম্পশিয়া। সা ধারণত ৬ মাস গর্ভধারণের পর অথবা প্রসবের সময় এ উপসর্গ দেখা দেয়। কখনো কখনো প্রসব পরবর্তী অবস্থায়ও এটি দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রসবের কাছাকাছি সময়ে এ রোগ দেখা দেয়। যেসব মায়ের আগে একবার একলাম্পশিয়া হয়েছে তাদের পরবর্তী প্রসবের সময় আবারো একলাম্পশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 


একলাম্পশিয়া হলে রোগীর বারবার খিঁচুনী হবে। খিঁচুনীর ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক সময় প্রবল খিঁচুনীতে এমনিতেই প্রসব শুরু হয়ে যেতে পারে। একলাম্পশিয়া হওয়ার আগে যে অবস্থাটা তাকে বলা হয় প্রি-একলাম্পশিয়া। এটি একলাম্পশিয়ার পূর্ব লক্ষণ।


প্রিএকলাম্পশিয়া/একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীর খিঁচুনীর তিনটি উপসর্গ রয়েছেঃ 

১। হাতে-পায়ে পানি আসা।

২। রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া।

৩। প্রস্রাবে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া।


একলাম্পশিয়ার জটিলতা সমূহ 

একলাম্পশিয়া রোগীর সন্তানের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।পরপর খিঁচুনির ফলে গর্ভস্থ সন্তান পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে সন্তানের শরীরের ক্ষতি হয়।এছাড়া খিঁচুনি বন্ধ করার জন্য যেসব ওষুধ মাকে দেয়া হয়, তার জন্যও সন্তান মারা যেতে পারে।এ রোগ কিডনিতে জটিলতা সৃষ্টি করে এবং প্রস্রাব অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়।প্রথম সন্তানের বেলায় এই অসুখ বেশি দেখা দেয়। মায়ের একলাম্পশিয়ার ইতিহাস থাকলে মেয়ের গর্ভকালীন সময়েও এ রোগ হতে পারে।


চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের স্থান 

প্রি-একলাম্পশিয়ার চিকিৎসা সময়মতো হলে একলাম্পশিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এজন্য প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। গর্ভকালীন সেবা বা এএনসি সঠিকভাবে গ্রহন করলে প্রি –একলাম্পিশয়া বা একলাম্পশিয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।


প্রতিরোধের উপায় 

একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন খিঁচুনী প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনঃ

নিয়মিত এন্টিনেটালা চেকআপ-প্রসব-পূর্ব বা গর্ভকালীন পরিচর্যা নিয়মিত রক্তচাপ মাপা,প্রসাবে প্রোটিন যায় কিনা পরীক্ষা করা, রক্তশূন্যতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা ,হাতে পায়ে পানি ইত্যাদি পরীক্ষা করা। যেহেতু একলাম্পশিয়া হওয়ার আগে প্রি-একলাম্পশিয়া হয়, তাই প্রি-একলাম্পশিয়া প্রতিরোধ করা গেলেই একলাম্পশিয়া হবে না। [1]


৪) প্রসবজনিত ফিস্টুলা

ফিস্টুলা হচ্ছে এক ধরনের অস্বাভাবিক নালি যার গায়ে কোষ কলা থাকে এবং যা আবরণী কলা দিয়ে আবৃত শরীরের যে কোন দুটি অংশের মধ্যে সংযােগ ঘটায়। [4]


৫) পেরিনিয়াম ছিড়ে যাওয়া

যােনি মুখে ও পায়ু পথের মাঝখানের জায়গাটিকে পেরিনিয়াম বলে। পেরিনিয়ামে কোন আঘাতের ফলে ক্ষত বা ছিড়ে যাওয়াকে পেরিনিয়াম ছিড়ে যাওয়া বলে। [4]


অন্যান্য জটিলতাসমূহ হলোঃ 


১। বহুমূত্র রোগ (ডায়াবেটিস)

যখন কারো বহুমুত্র রোগ থাকে, তাদের শরীর তাদের রক্তে গ্লুকোজ (চিনি)-এর সীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নিয়ন্ত্রণহী ন রক্তের গ্লুকোজ সীমা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা করতে পারে। দুই ধরনের বহুমুত্র রোগ আছে: টাইপ-১ (ইনসুলিন নির্ভর) বহুমূত্র রোগে মানুষের শরীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরী করতে পার না। তাদের রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ইনসুলিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হয়। 


টাইপ-২ বহুমূত্র রোগে মানুষের সমস্যা একটু ভিন্ন। তাদের পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে, কিন্তু তাদের শরীর একে যথাযথভাবে ব্যবহার করে না, তাই রক্তে চিনির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগ সাধারণত খাবার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম, এবং কখনো ঔষধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


গর্ভাবস্থার শুরুতে এমনকি গর্ভধারণের পূর্বে ডাক্তার বা বহুমুত্র রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে আপনি ভালো যত্ন পাবেন এবং রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।


ভালোযত্ন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ডায়াবেটিক মহিলারা সফল গর্ভধারণ করতে পারে। খাদ্যের ব্যাপারে তাদেরকে অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে এবং নিজে নিজে প্রায়ই রক্তে চিনির পরীক্ষা করতে হবে। ডায়াবেটিস গর্ভবতী  মহিলাদের যত্ন এবং তাদের ঔষধ ঠিক করে দেয়ার জন্য বারবার ডাক্তার/বিশেষজ্ঞ দেখানো প্রয়োজন।


গর্ভকালীন বহুমূত্র রোগ গর্ভা বস্থার দ্বিতীয় অর্ধাংশে হতে পারে। গর্ভকালীন বহুমূত্ররোগ মহিলাদের রক্তে চিনির পরিমাণ অস্বাভাবিক অধিক মাত্রায় থাকে।এই ধরনের মহিলাদের কঠোর খাদ্য সংযম অভ্যাস এবং ব্যায়াম কর্মসূর্মচী মেনে চলা প্রয়োজন।

কিছু ক্ষেত্রে, মহিলাদের ইনসুলিন ইনজেকশনসহ অন্যান্য ঔষধের প্রয়োজন পরে। প্রতি ১০০ জন গর্ভকালীন বহুমূত্র রোগ মহিলার মধ্যে ৩০ জনের বাচ্চা গড়ে বড় আকৃতির হয়। তাদের প্রসবের সময় কিছু রকমের হস্তক্ষেপ যেমন সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন দরকার পরে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব মহিলাদের গর্ভকালীন বহুমূত্র রোগ হয় তাদের পরবর্তী জীবনে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে । এটা সাধারন যে গর্ভাবস্থায় সকল গর্ভবতী মহিলাদের অন্তত: একবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। [3]


২। রক্তস্বল্পতা

গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা আরও একটি বড় জটিলতা। যদি গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০০ মিলিলিটারে ১০ গ্রাম থেকে কম থাকে অথবা রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম থাকে, তবে তাকে গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বলে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের মহিলাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ।


রক্ত স্বল্পতার লক্ষণগুলো

ক) অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার সঙ্গে দ্রুতগতির হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া,  

খ) চেহারা নীলাভ হয়ে যাওয়া৷ বিশেষত নোখ নীল বা সাদাটে হয়ে যাওয়া,  

গ) কথা বলার সময় এক নিঃশ্বাসে কথা শেষ করতে না পারা,

ঘ) ঘোরের মধ্যে চলে যাওয়া বা শরীর ঝিমঝিম করা এসব গুলো হল রক্তস্বল্পতার লক্ষণ।


এই সমস্যা মোকাবেলায় গর্ভধারণের শুরু থেকে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহসমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন: কচুশাক, কাঁচা কলা, পেয়ারা, শিম, মটরডাল, বাঁধাকপি, কলিজা, গোশত, খোলসসহ মাছ, যেমন চিংড়ি মাছ। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার কারণে অকালে শিশুর জন্ম হতে পারে। কম ওজনের শিশু হতে পারে। রক্তাল্পতার কারণে শিশুর রোগগ্রস্ততা এবং মৃত্যুর হার বেশি হতে পারে। তাই এই জটিলতা এড়িয়ে চলতে লক্ষণ বুঝে সচেতন হন। [2]


৩। অতিরিক্ত বমি হওয়া

গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া খুব সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্ত অতিরিক্ত বমি হওয়া মোটেও সাধারণ কোন ব্যাপার নয়। বমির কারণে বা বমি ভাবের কারণে আপনি কিছু খেতে বা পান করতে পারছেন না যখন তখন আপনার ড্রিহাইড্রেশন প্রব্লেম প্রবল আকারে দেখা দেবে যার যেটা আপনার বাচ্চার জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। তাই এই সমস্যা দেখা দিলেই আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সে আপনাকে আপনার ডায়েট বদলে দেবে অথবা আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে। [2]


৪। শিশুর মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া

গর্ভে সন্তান ধারণকারী প্রতিটি মা'ই পেটে সন্তানের নড়াচড়া অনুভব করেন। হুট করে যদি অনুভব করেন যে আপনার বাচ্চার মুভমেন্ট টের পাচ্ছেন না তাহলে এটা সত্যি আপনার গর্ভাবস্থার বড় ধরণের জটিলতা। যদি আপনি ভালো ভাবে মনোযোগ দিয়ে আপনার বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল করে থাকেন তাহলে বাচ্চার মুভ করা বন্ধ হয়ে খুব সহজেই সেটা বুঝে যাবেন। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে এক মুহূর্ত দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চলে যান। যত সময় অপচয় করবেন আপনার আর আপনার বাচ্চার জিবন তত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। [2]


৫। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত চাপ মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন গর্ভাবস্থায় শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ মহিলা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। গর্ভকালীন প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া গেলে একদিকে মা ও সন্তানের জীবনের ঝুঁকি যেমন কমানো যায় তেমনি পরবর্তীতে কিডনি ও হৃদরোগ সমস্যা খানিকটা হলেও রোধ করা যায়।


উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষ সতর্কতা


ক) গর্ভাবস্থায় প্রতিবার চিকিৎসকের কাছে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের জন্য গেলে অবশ্যই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা জরুরি।

খ) ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, হাতে-পায়ে পানি আসা, মাথা ও ঘাড়ে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন ও রক্তচাপ মাপুন।

গ) খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও পাতে কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলুন।

ঘ) গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ওষুধ খাওয়া যায় না, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। [2]


গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা [4]

প্রতিবছর গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতায় আমাদের দেশে বহু নারীর মৃত্যু হয়। গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবে মা ও শিশু উভয়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।


তাই গর্ভকালীন সমস্যা বিষয়ে সচেতনতা ও সঠিক পরিচর্যাই পারে মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের কিছুসাধারণ সমস্যা ও করণীয় দিকসমূহ নিয়ে নিম্নে আলােচনা করা হলাে-


১। বমি ভাব ও বমি- এটা খুব সাধারণ সমস্যা এবং বলা হয় যে, এটা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ। সাধারণতঃ হরমােনের তারতম্যের কারণে এমনটি হয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস এ সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে সকালের দিকে কারাে কারাে ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় দেখা দিতে পারে। পরে আপনা আপনি এ সমস্যা দূর হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক, যে সব মায়েদের এ সমস্যা দেখা দেয় তাদের সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তেলবিহীন শুকনাে খাবার যেমন- মুড়ি, খই, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি খেয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে হবে।বারবার অল্প করে খেতে হবে।খাবারের অন্ততঃ ৩০ মিনিট পর পানি খেতে হবে। প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


২। রক্ত স্বল্পতা- অনেক সময় গর্ভাবস্থায় রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম মাস থেকে ফলিক এসিড এবং ৩ মাসের পর থেকে আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে। আয়রনযুক্ত খাবার যেমন- কচু শাক, কলিজা, তেঁতুল, তরমুজ, ডিম ইত্যাদি খেতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন-আমলকি, লেবু, কাঁচামরিচ, পেয়ারা, আনারস এবং কাঁচা ফলমূল খেতে হবে ।


৩। কোষ্ঠকাঠিন্য- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা থাকে। খাবার গ্রহণ, প্রয়ােজন মতাে পানি পান না করা ও অনিয়মিত পরিশ্রমের ফলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।প্রচুর পরিমাণ শাক সবজি ও টাটকা ফল খেতে হবে। যেমন- আম, কলা, গাছ পাকা পেয়ারা, খেজুর, পেঁপে, আপেল ইত্যাদি। এছাড়া দুধ, কলা, রুটি, ভাত খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত ঘরের কাজ ও হাঁটা চলা করতে হবে।প্রয়ােজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইসবগুলের ভুষি খেতে হবে।


৪। গলা ও বুক জ্বালা- গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে গলা ও বুক জ্বালা একটি সাধারণ সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. সহজপাচ্য খাবার বার বার অল্প করে খেতে হবে, খ. খাওয়ার পরপর শােয়া যাবে না। বেশি প্রয়ােজন হলে মাথার নিচে দুটি বালিশ দিয়ে অর্ধশয়ন অবস্থায় শুতে হবে, গ. মশলাযুক্ত ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে, ঘ. প্রচুর পরিমাণ পানি এবং সম্ভব হলে দুধ পান করতে হবে, ঙ. প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


৫। অনিদ্রা: গর্ভাবস্থায় শেষের দুই – তিন মাস অন্দ্রিার ভাব হয়। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. বিকেলে হাঁটা,শােবার আগে গরম দুধ খাওয়া বা বই পড়া ইত্যাদিতে উপকার হতে পারে, খ. প্রয়ােজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


৬। খিল ধরা- গর্ভকালে কোন কোন স্নায়ুর উপর চাপ পড়লে গৰ্ভৰ্বতীর পা বা উরুতে খিল ধরতে পারে। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়ামের অভাব হলেও এ রকম হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. পা শরীর থেকে উঁচু জায়গায় রেখে শুলে অথবা পা ছড়িয়ে বসে পায়ে তেল মালিশ করলে বা বার বার গােটালে ও ছড়ালে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।


৭। পিঠে ব্যথা- গর্ভের প্রথমাবস্থা থেকে এ কষ্ট অনেক সময় দেখা দেয় যা শেষের দিকে খুব বেড়ে যেতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. শক্ত বিছানায় ঘুমালে উপকার পাওয়া যেতে পারে, খ. শিরদাঁড়ায় ম্যাসেজ করা যায়, গ. হাঁটা চলার সময় কোমরে বেল্ট ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়, ঘ. সামনে ঝুঁকে কোন কাজ করা যাবে না, ঘ. ভারী জিনিস উঠানাে যাবে না।


৮। পায়ের শিরা ফুলে যাওয়া অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের শিরা ফুলে যেতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. দীর্ঘ সময় দাঁড়ানাে যাবে না, খ. পা তুলে বসতে হবে, গ.প্রয়ােজনে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে, ঘ. প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


৯। পা ফোলা- গর্ভাবস্থায় পা ফুলতে পারে। শরীরে লবণ বৃদ্ধির ফলে পায়ের গােড়ালি ফুলে যায় ও পানি জমে। শরীরে পানি জমলে বা শরীর ফুলে গেলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রােগীর রক্ত চাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও ওজন দেখা উচিত। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. পা উঁচুতে রেখে বিশ্রাম নেওয়া, খ. খাবারের সাথে বাড়তি লবণ না খাওয়া, গ. প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


১০। বুক ধড়ফড় ও শ্বাস কষ্ট- গর্ভাবস্থায় হার্টের কাজ বেড়ে যায়। কারণ মা ও শিশু উভয়ের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়ােজন হয়। এতে মায়ের রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। এসব কারণে বুক ধড়ফড় করে। জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়ে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. বিশ্রাম নিতে হবে, খ. একটানা হাটা ও কাজ করা যাবে না, গ. বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।


১১। মূত্র নালির সংক্রমণ- গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে জ্বালা পােড়া হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় দিক- ক. প্রচুর তরল পানীয় খেতে হবে, খ. প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


১২। জ্বর- গর্ভাবস্থায় খুব জ্বর হলে মা ও বাচ্চার উভয়ের জন্য খুব বিপজ্জনক হতে পারে। এরূপ হলে হাসপাতালে বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


১৩। অর্শ- কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শ যদি একই সঙ্গে থাকে তবে তা গর্ভাবস্থায় বেড়ে যায়। সুতরাং পায়খানা পরিস্কার হওয়া দরকার। এ অবস্থায় দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


১৪। মাথা ব্যথা- অতিরিক্ত পরিশ্রম, ক্ষুধা এবং গরম লাগলে মাথা ব্যথা হতে পারে। এ কারণে এগুলাে এড়িয়ে চলা উচিত।


১৫। তলপেটে ব্যথা- জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হয়ে এর আশে পাশের লিগামেন্টে টান পড়ার জন্য তলপেটে ও কুঁচকিতে হালকা ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা স্বাভাবিক। এ ব্যথা পাঁচ- ছয় মাসের দিকে হয়।


১৬। সাদা স্রাব- গর্ভাবস্থায় হরমােন ইস্ট্রোজেন ও রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জন্য সাদা স্রাব বেড়ে যেতে পারে। ঢিলেঢালা পােশাক ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, সাদা স্রাবের সাথে যদি দুর্গন্ধ থাকে বা চুলকানি হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


১৭। বারবার প্রস্রাবের বেগ- গর্ভের প্রথম তিন থেকে চার মাস এটি হওয়া স্বাভাবিক। প্রস্রাবের জ্বালা পােড়া না থাকলে এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।


১৮। রক্তপাত- গর্ভকালীন সময়ে যে কোন ধরনের রক্তপাতই হতে পারে মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। এক্ষেত্রে মাকে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। জরায়ু ছাড়া অন্য কোন স্থানে ডিম্বাণুর অবস্থান (Ectopic pregnancy) ছােট খাটো অভ্যন্তরীণ ঝামেলাসহ গর্ভপাত হতে পারে এ সামান্য একটি কারণে। এছাড়াও আরাে কিছু সমস্যা বিশেষ করে প্রথমদিকে মাথা ঘােরা, অরুচি, দুর্বল লাগা, আলসেমি লাগা, শেষের দিকে উঠতে বসতে বা শােয়া থেকে উঠতে কষ্ট লাগা। গায়ে মুখে বিশেষ করে গলায় কালাে দাগ পড়া, পেটের চামড়া ফেটে যাওয়া বেশি পিপাসা লাগা বা ক্ষিধে পাওয়া এগুলাে হতে পারে। [4]


তথ্যসূত্রঃ [1]ডা. রাশিদুল ইসলাম] [2]সুপারমমডটকম] [3]মাইফেয়ারিল্যান্ডবিডি] [4] অবাকপাঠশালা]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url