স্মার্টফোন চুরিঃ বিষ্ময়কর এক সকাল
গতকাল রাতের সময়টা ছিল কিছুটা ব্যস্ত ও বিদঘুটে। সকাল আটটা পঞ্চাশে ছিল মিডটার্ম। বাসা থেকে ক্যাম্পাসের দূরতে তিন কিমি হবে যেখানে রিকশায় মিনিট বিশেক লাগে। উল্লেখ্য যে, আমি আজ তিন বছর ধরে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী 🥺। রাতে ল্যাফটপ এ কাজ শেষ করে মধ্যরাতে শুয়ে পড়লেও, ঘুম আসতে তিনটা বেজে যায়; যার মাঝখানে 'টার্নিং রেড (২০২২)' এনিমি দেখা শেষ করি। যথারীতি সকালে এলার্ম দিয়ে মোবাইল বালিশের পাশে রেখে ঘুমিয়ে যাই।
এদিকে সকাল সাড়ে-সাতটার দিকে পাশেরুমের এক বন্ধুর ইশারায় ঘুম ভাঙে। তারপর সময় দেখার জন্য নিজের ফোনটি খুঁজতে গিয়ে দেখি, নাই (মিসিং)। ভালোকরে খুঁজে দেখলাম, পেলাম না। অপরপাশে, রুমমেটের ফোন ঠিকঠাক বা অন্য কিছু চুরির মতো আলামত পাচ্ছিনা। অতপর, ফ্ল্যাটের অন্য এক বন্ধুর ফোন থেকে আমার নাম্বারে কল দিয়েও লাভ হয়নি, মানে সিম অফ।
অবশেষে বুজতে পারলাম যে, আমার স্মার্টফোন হয়তো কেউ নিজের মনে করে নিয়ে গেছে। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে জানলাম যে, গতকাল আমাদের রুমের ও ফ্ল্যাটের দরজা দুটোই লক করা হয়নি। তাছাড়া, ফ্ল্যাটের অন্য এক বড় ভাই বললো, ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা বাহিরে থেকে লকড ছিল এবং স্পেসে প্রচণ্ড নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবনের সুঘ্রাণ পাওয়া গিয়েছিল। আচ্ছা, বুজলাম।
এতো ভাবার সময় নেই, যা যাওয়ার গেছে, একটুপর মিডটার্ম আছে; তাই তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে। এর মাঝে জিডি করার কথা মাথায় আসছিল। পরক্ষণেই, আমার নাম্বারে অন্য একজন বন্ধু কল দেয়াতে বাবুল নামের এক ভদ্রলোক রিসিভ করেন। তিনি ফোনের ব্যাপারে বলেন যে, এই ফোনটি গতরাতে কিছু টিকটকার ও অল্পবয়সী ছেলেদের কাছ থেকে (সদরঘাট এলাকায়) উদ্ধার করা হয়।
যাক মনে কিছুটা প্রশান্তি লাগলো। ক্যাম্পাস যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে গিয়ে দেখি আমার ওয়ালেট নেই। যদিও ওয়ালেটে ছিল মাত্র ষাট টাকা ও কিছু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্ড। মোবাইল হারিয়ে যতোটা না খারাপ লাগছিল, তারচেয়ে বেশি ওয়ালেট চুরি গিয়ে। কেননা, এখন জিডি, হয়রানি, ও দৌড়াদৌড়ি এগুলো খুবই অস্বস্তিকর। তখনো, আমি জানতাম না যে, ওয়ালেট সমেত মোবাইলটি তিনি উদ্ধার করেছেন।
আমার খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, ভাই ওয়ালেট থেকে টাকা নিয়ে, ওয়ালেটের কার্ডগুলো রেখে যেতে পারতি। "তুই, স্মার্টওয়াচ নে, নেকব্যান্ড নে, আর না হয় স্পিকার নে"- আরো কতো কিছু নিতে পারতি! খুবি গরিব চোর, না না বাচ্চা চোর। আমি এদেরকে কলকাতার 'মনচুরি (২০১৫)' মুভিটা দেখার জন্য বলতাম। মজার কাহিনি হলো, ওই চোর বা ছেলেটি তার নিজের মাথার ক্যাপ (যা পুলিশকে হস্তান্তর করি) ও নিজের পায়ের সেন্ডেল ফেলে যায়, এবং ফ্ল্যাটের এক ভাইয়ের বাটা স্যান্ডেল নিয়ে যায়।
বুজলাম না, এতো তাড়া কিসের তোর বাপু। চুরিবিদ্যাটাও ভালো করে শিখলে না। কী লজ্জ্বা। আসলে যে মোবাইলটি নিয়েছে, সে হয়তো প্রফেশনাল চোর না। তার হয়তো টিকটক ও নেশার প্রয়োজনে টাকার দরকার ছিল তাই শুধু মোবাইল ও ওয়ালেটকে টার্গেট করছে।
যাইহোক, ঐ যে বাবুল ভাই, সে তার নিজের নাম্বার আমাদের দিল। এছাড়া, ফোন ও ওয়ালেট দুটো সে সদরঘাট পুলিশপাড়ির এএসআই (মিলন ভাই)কে কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে বিশিষ্ট সাংবাদিক সাহিদুলের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ফোনটি সেখানের দায়িত্বরত এসআই (রুবেল ভাই) এর কাছে আছে। পরবর্তীতে, আমরা সদরঘাট পৌছাতে সকাল আটটা চল্লিশ বেজে যায়, আবার এদিকে রুবেল ভাইয়ের জজকোর্ট যাওয়ার তাড়া ছিল। অতপর, প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রুবেল ও মিলন ভাইয়ের কাছ থেকে ফোন ও ওয়ালেট ফেরত নেই। উল্লেখ্য, রুবেল ভাই জবি রসায়নের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাছাড়া, এএসআই মিলন ভাইয়ের ভাষ্যমতে, যারা এই কাজটি করেছে তারা একসাথে তিনটি মোবাইল চুরি করেছে এবং এরা সংঘবদ্ধ টিকটক গ্রুপ, যাদের সদরঘাটের আশেপাশে মাঝেমাঝে দেখতে পাওয়া যায়। মিলন ভাইয়ের ভাষ্যমতে, তারা অনেকদিন ধরে এই ধরনের টিকটকার ও নেশাগ্রস্ত ছেলেদের চুরি, হয়রানি বা অন্য সকল অপকর্ম বিষয়ে ব্যাপক তৎপর এবং উদ্ধারকৃত মালামাল যথাযথ ব্যক্তিদের ফেরত দিয়ে আসছেন। পরবর্তীতে, আমাদের মিডটার্ম থাকায় দ্রুত রুবেল ভাই বাইকে করে ক্যাম্পাসে দিয়ে আসে আমাদের।
কিন্তু যিনি মূলত মোবাইল ও ওয়ালেট উদ্ধার করেছেন, সাথে বেশিক্ষণ কথা বলার সুযোগ পাইনি এবং উনার সাথে ছবিটা ও তোলা হয়নি 😪। বাবুল (বরিশাল) ভাইয়ের বক্তব্য হলো, "সকাল ৭টার দিকে ৪টা ছেলে ঘাটে তিনটা স্মার্টফোন বিক্রি করার চেষ্টা করে। ফোনের লক স্ক্রিনের আমার ছবি থাকায়, ছেলেদেরকে সন্দেহজনক মনে হলে, উপস্থিত কয়েকজনে মিলে তাদেরকে ধরে পুলিশের এএসআই মিলন ভাইকে জানায় এবং তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।"
তবে, সবচেয়ে ভালো কাজ যা করছে তা হলো- আমার ফোন থেকে সিম খুলে নিজের ফোনে ইনসার্ট করে এবং আমাদের ফোন কলে পরে উনার সাথে কথা বলার সুযোগ পাই। উনি, এই কাজটি না করল হয়তো আমরা জানত পারতাম না যে ফোনটি কোথায় আছে বা কার কাছ? হয়তো বা সিমগুলো অফই থাকতো। হয়তো পেতাম কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যেত। বাবুল ভাইয়ের মতো মানুষদের মহৎ প্রচেষ্টায় এই শহরে নির্ভয়ে চলার শক্তি পাই। উনার জন্য থাকবে, সবসময় দোয়া।
সবশেষে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে হারিয়ে যাওয়া জিনিস এই শহরে ফিরে ফেলাম তাও আমার থেকে প্রায় ৩কিমি দূরে।তাছাড়া, মিডটার্ম না থাকলেও হয়তো এতো তাড়াতাড়ি বুজতে পারতাম না। মানে, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই। আল্লাহ তাইতো বলেছেন, লা তাহযান বা তোমরা হতাশ হবেনা।
বি.দ্র. ঢাকা শহরের সাত বছরের সময়ে এই প্রথম বিষ্ময়কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। (১৩ই মার্চ, ২০২২ এর সকাল)
_মাহিন/সমাজকর্ম/জবি