গবেষণা, সামাজিক গবেষণা ও সমাজকর্ম গবেষণা
গবেষণা কী? (What is Research)
গবেষণা হলো একটি পদ্ধতিগত সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ তথ্য আহরণ করা যায় এবং সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। কোনো ঘটনা বা সমস্যার প্রকৃতি, কারণ, প্রভাব প্রভৃতি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। গবেষণার ইংরেজি প্রতিশব্দ জবংবধৎপয যার শাব্দিক অর্থ হলো পুনরায় (Re) অনুসন্ধান (Search)। সমাজকর্ম অভিধান অনুযায়ী গবেষণা হলো একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব স্যোশ্যাল সাইন্সেস (১৯৩০) এর ভাষ্যমতে, গবেষণা হলো জ্ঞান সৃষ্টি, সংশোধন বা যাচাইপূর্বক সাধারণীকরণের উদ্দেশ্যে বস্তু, প্রত্যয় বা প্রতীক নিয়ে কাজ করা, যাতে সেই জ্ঞান কোনো তত্ত্ব সৃষ্টি বা কোনো কৌশল অনুসন্ধানে সহায়তা করতে পারে।
খুরশীদ আলম তাঁর ‘সমাজ গবেষণা পদ্ধতি’ (২০০৩) গ্রন্থে বলেন, গবেষণার কাজ হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সত্যকে অুসন্ধান করা। অন্যকথায়, গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে বর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্ক জানা: ক) পুরাতন তথ্য দিয়ে নতুন তথ্য সামান্যকীরণ করা; খ) নতুন তথ্য দিয়ে পুরাতন সত্যকে জানা; গ) পুরাতন তথ্য দিয়ে নিত্য নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা; ঘ) সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব বা ধারণা সৃষ্টি করা বা নতুন কোনো ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করা; এবং ঙ) গবেষণাধীন বিষয়ে কোনো বৈপরীত্য থাকলে তা দূর করা।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণা মূলত জ্ঞনার্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট, সার্বিক ও যথাযথ সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা সম্ভব।
সামাজিক গবেষণা (Social Research)
সামাজিক গবেষণা সামাজিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। সমাজজীবনের বিভিন্ন দিকের সঠিক চিত্র তুলে ধরে সামাজিক গবেষণা। সমস্যার কারণ, সমস্যার বিশ্লেষণ, সমাধান ব্যবস্থা এমনকি সমস্যা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব জানার ক্ষেত্রেও সামাজিক গবেষণা সহায়তা করে। সাধারণভাবে সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের তত্ত্ব গঠন, কোনো ঘটনা বা বিষয় এবং সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি উদঘাটনের জন্য যেসব গবেষণাকর্ম পরিচালিত হয় তাই হলো সামাজিক গবেষণা।
সামাজিক গবেষণার সংজ্ঞায় কেনেথ ডি. বেইলি বলেন, “সামাজিক গবেষণা হচ্ছে তথ্য আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রয়াস যা সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর প্রদানে আমাদেরকে সহায়তা করে এবং সমাজ সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞাত হতে সক্ষম করে তোলে।”
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল রিসার্চ (ভলিউম-১,১৯৯৭) এর ভাষ্য অনুযায়ী, সামাজিক গবেষণা সামাজিক প্রপঞ্চ নিয়ে অনুসন্ধান করে এটা সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের আচার-আচরণ, তাদের অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাপন প্রণালী ইত্যাদি বিভিন্ন আঙ্গিক জানার চেষ্টা করে।
পি. ভি ইয়ং মতে, “সামাজিক গবেষণাকে একটি বৈজ্ঞানিক উপলব্ধি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে; যৌক্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে যার লক্ষ্য হলো:
ক) নতুন তথ্য উদঘাটন বা পুরাতন তথ্য যাচাই করা;
খ) উপযুক্ত তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণে এদের পারস্পরিক অনুক্রম, আন্তসম্পর্ক এবং কার্যকরণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা;
গ) নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ মানব আচরণ অধ্যয়নের সুবিধার্থে নতুন বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার, প্রত্যয় ও তত্ত্ব উন্নয়ন করা।”
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিক গবেষণা এমন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ও যুক্তিসঙ্গতভাবে সমাজের নতুন কোনো তথ্য উদঘাটন, অতীত বিষয়ের সত্যতা নিরূপণ বা যাচাই এবং এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক আন্তসম্পর্ক ও কার্যকরণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের আচরণের সংশ্লিষ্টতা নিরূপণ করা হয়।
সমাজকর্ম গবেষণা (Social Work Research)
সমাজকর্ম গবেষণা নানাবিধ সামাজিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিশ্লেষণ ও সমাধানের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য সমাজকর্ম গবেষণা সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক পদ্ধতি। সাধারণভাবে বলা যায়, সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার স্বরুপ, প্রকৃতি, কারণ নির্ণয় এবং সমাধানের জন্য সেবার মাত্রা নির্ধারণ, প্রদত্ত সেবার যথার্থতা মূল্যায়ন এমনকি সমাজকর্মে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের কার্যকারিতা পরীক্ষা ও যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া হচ্ছে সমাজকর্ম গবেষণা।
ওয়াল্টার এ. ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্ম গবেষণার সংজ্ঞায় বলেন, সমাজকর্ম গবেষণা হচ্ছে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা, প্রত্যয় এবং তত্ত্বের যাচাই, সাধারণীকরণ এবং প্রসারের লক্ষ্যে সমাজকর্ম সংগঠন, কার্যক্রম এবং পদ্ধতির যথার্থতা নির্ণয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক ও পর্যালোচনামূলক অনুসন্ধান।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল ওয়ার্ক ইন ইন্ডিয়া (ভলিউম-৩; ১৯৮৭) এর ভাষ্যানুযায়ী, “সমাজকর্ম গবেষণা হচ্ছে জ্ঞান এবং বিকল্প অনুশীলিত জ্ঞান সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা পেশাগত সমাজকর্মে সরাসরি প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করে এবং যা সমাজকর্ম পদ্ধতিসমূহকে অনুশীলনের ক্ষেত্রে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।”
আরনেস্ট গ্রিনউড এর মতে, “সমাজকর্ম গবেষণা হচ্ছে সমাজকল্যাণক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রশ্নের (সমস্যা) এমন এক সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকর্মের সমস্যাবলীর উত্তর (সমাধান) খুঁজে বের করা এবং সমাজকর্মের জ্ঞান ও ধারণাসমূহের সম্প্রসারণ ও সাধারণীকরণ করা।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকর্ম গবেষণা হলো সমাজকর্মে ব্যবহৃত জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহের ধারণা সাধারণীকরণের লক্ষ্যে এদের যথার্থতা ও কার্যকারিতা নির্ণয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা সমাজের ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকেন্দ্রিক সমস্যাবলীর কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান ব্যবস্থায় যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সমাজকর্ম একটি পেশাগত সাহায্যদান প্রক্রিয়া। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার স্বরূপ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমস্যার যথাযথ সমাধান প্রদান করা সমাজকর্মের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির মাঝে বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি, ধরন ও কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতির উদ্ভাবন, যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রয়োগকৃত পদ্ধতি ও কৌশলের যথার্থতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তাই হলো সমাজকর্ম গবেষণা। সমাজকর্ম গবেষণা সামাজিক গবেষণার রূপান্তরিক রূপ। অন্যদিকে সমাজের কোনো ঘটনা, বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কিত অনুসন্ধান কার্যের মাধ্যমে নতুন কোনো তত্ত্ব গঠন বা সিন্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া হলো সামাজিক গবেষণা, যা মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিন্নরূপ। আবার গবেষণা হলো একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং সংগৃহীত তথ্যাবলী বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
সমাজকর্ম গবেষণার ধাপ (Steps of Social Work Research)
সমাজকর্ম গবেষণা মূলত সমস্যার সমাধান কর্মসূচি প্রণয়ন বা তার যথাযর্থ বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী কৌশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কতগুলো ধাপ বা পর্যায় অতিক্রম করে সামগ্রিক গবেষণা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। সার্বিকভাবে সমাজকর্ম গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব ধাপ অতিক্রম করতে হয় তা আলোচনা করা হলো:
১. গবেষণার সমস্যা বা বিষয় নির্বাচন: সমাজকর্ম গবেষণার প্রথম ধাপে সমাজকর্মী সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা সমস্যা বা গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করে থাকেন। সাধারণত সমস্যা হলো সমাজের এমন অবাঞ্ছিত অবস্থা যা সমাজের অধিকাংশ লোকের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কিন্তু গবেষণা সমস্যা অন্য অর্থ পরিগ্রহ করে। গবেষক কোন সামাজিক সমস্যা নিয়ে কোন বিষয়ের প্রতি জনগণের মনোভাব জানার জন্য বা কোন পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। যে বিষয়ের ওপর গবেষণা পরিচালিত হয় তাকেই গবেষণা সমস্যা বলা হয় ।
২. প্রাসঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা: গবেষণার ক্ষেত্রে সাহিত্য পর্যালোচনা অপরিহার্য বিষয়। সমস্যা বা বিষয় নির্দিষ্ট করার পর উক্ত বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন জরুরি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থ, জার্নাল, পত্রপত্রিকা পাঠ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া গবেষণাধীন বিষয়ে পূর্বে কোনো গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকলে উক্ত গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষণা বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা পাওয়া যায়।
৩. উদ্দেশ্য নির্দিষ্টকরণ: প্রত্যেকটি গবেষণার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা অত্যাবশ্যক। উদ্দেশ্য নির্ধারণের ম্যাধমে গবেষণা কোন পথে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করা হয়। গবেষণায় একটি সাধারণ বা মূল উদ্দেশ্য থাকে এবং একাধিক বিশেষ বা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে।
৪. অনুমিত সিদ্ধান্ত প্রণয়ন: হাইপোথিসিস বা অনুকল্প হলো গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে পূর্ব সিদ্ধান্ত যার সত্যতা নিরূপণের জন্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এ পর্যায়ে গবেষক গবেষণাধীন বিষয় সম্পর্কে পূর্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গবেষণার পরিভাষায় যা হলো অনুকল্প বা পূর্বানুমান। এই অনুমিত সিন্ধান্তই সমগ্র গবেষণা প্রক্রিয়ায় গবেষকের দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।
৫. গবেষণা নকশা প্রণয়ন: গবেষণা নকশা অনুসন্ধান কার্যের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার একটি কার্যক্রম বিশেষ। গবেষণার অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর উক্ত অনুকল্প প্রমাণের জন্য গবেষককে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হয় যা গবেষণা নকশা হিসেবে পরিচিত। নকশার মাধ্যমে গবেষণা সংক্রান্ত সকল পরিকল্পনা ও কার্যক্রম জানা যায়। তাই গবেষণা নকশাকে গবেষণার ব্লুপ্রিণ্ট বলা হয়। একটি উত্তম গবেষণা নকশায় যে সকল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকে তা হলো: তথ্যের উৎস্য ও প্রকৃতি নির্ধারণ; গবেষণার জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা নির্বাচন; গবেষণার সমগ্রক, নমুনা ও বিশ্লেষণের একক নির্বাচন; তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, কৌশল ও মাধ্যম নির্ণয়; প্রয়োজনীয় উপকরণ ও কর্মী সংগ্রহ; কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান; বাজেট প্রণয়ন এবং সময়সূচি নির্ধারণ।
৬. প্রত্যয়সমূহের কার্যকরী সংজ্ঞায়ন: গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক কিছু চলক বা বিশেষ অর্থবোধক প্রত্যয় বা শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। এসকল চলক বা প্রত্যয়ের কার্যকরী সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান জরুরি। কেননা অনেক সময় কোনো কোনো চলক একাধিক অর্থবোধক হতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি অনুযায়ী চলকসমূহের সংজ্ঞা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৭. পদ্ধতি নির্ধারণ: গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলত কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়। সামাজিক জরিপ, কেস স্ট্যাডি, নৃ-তাত্ত্বিক পদ্ধতি বা পরিবীক্ষণ পদ্ধতি কোনটা ব্যবহার করা হবে সেটির সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হয়। কারণ পদ্ধতি প্রয়োগের ভিন্নতার জন্য গবেষণার নকশা, ফলাফল বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের ধরনও পরিবর্তিত হয়।
৮. তথ্য সংগ্রহ: সমাজকর্ম গবেষণায় তথ্য সংগ্রহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। তথ্য সংগ্রহের উপরই মূলত গবেষণার ফলাফল নির্ধারিত হয়। প্রয়োজনীয় ও যথাযথ তথ্য সংগৃহীত না হলে অনেক সময় গবেষণাকর্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এ পর্যায়ে গবেষক নিজে বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ বেতনভুক্ত কর্মীদের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ, প্রশ্নপত্র, অভীক্ষণ, ফোকাস দল আলোচনা, সরেজমিন অংশগ্রহণসহ নানা ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
৯. তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ: গবেষণার সংগৃহীত তথ্যাবলী সাধারণত অবিন্যস্ত, অসংগঠিত ও বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে। ফলে উক্ত তথ্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ফলাফল প্রদান করা যায় না। সমাজকর্ম গবেষণার এ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যাবলী সম্পাদনার পর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সুবিন্যস্তভাবে শ্রেণিবিন্যাস ও তালিকাকরণ করা হয় এবং উক্ত তথ্যগুলো যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়।
১০. গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন: সমাজকর্ম গবেষণার এ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যের আলোকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। সাধারণত চিত্র, সারণি, তালিকা ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে গবেষণা ফলাফল যথাযথভাবে উপস্থাপনার চেষ্টা করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন সাধারণত পর্যায়ক্রমিক এবং সহজ ও বোধগম্য হয়ে থাকে।
সমাজকর্ম গবেষণা হলো প্রণালীবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কতগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করা হয়। যদিও এই ধাপ বা পর্যায়গুলোর প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদা কাজ সম্পন্ন হয়, তথাপিও এগুলো একে অপরের উপর পরস্পর নির্ভরশীল। মূলত এই পর্যায়গুলোর যথাযথ বাস্তবায়নই সমাজকর্ম গবেষণার পূর্ণাঙ্গতা প্রকাশ পায়। সমাজকর্ম গবেষণার পর্যায় বা ধাপসমূহ হলো: ১) গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ, ২) সাহিত্য সমীক্ষা, ৩) উদ্দেশ্য নির্দিষ্টকরণ, ৪) অনুকল্প গঠন, ৫) গবেষণা নকশা প্রণয়ন, ৬) প্রত্যয়সমূহের কার্যকরী সংজ্ঞায়ন, ৭) পদ্ধতি নির্ধারণ, ৮) তথ্য সংগ্রহ, ৯) তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ এবং ১০) গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন।
গবেষণা প্রস্তাবনা (Research Proposal)
গবেষণা প্রস্তাবনা সামগ্রিক গবেষণা কার্যক্রমের পূর্ব পরিকল্পনা। একজন গবেষক যখন কোনো বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে চান, তখন অবশ্যই তাকে গবেষণা প্রস্তাবনা তৈরি করতে হয়। গবেষণা প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করেই গবেষক সামগ্রিক গবেষণাকর্ম পরিচালনা করে থাকেন। একটি উত্তম গবেষণা প্রস্তাবনায় যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে তা হলো :
১) গবেষণা শিরোনাম : গবেষণাধীন বিষয়ের একটি সুনির্দিষ্ট শিরোনাম থাকতে হয়। অর্থাৎ গবেষক যে বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করবেন তার একটি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট শিরোনাম ঠিক করবেন যার মাধ্যমে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়। গবেষণা শিরোনামটি এমন হতে হবে যেন খুব বেশি বড় না হয়, আবার ছোটও না হয়। গবেষণা শিরোনামটি দেখে যে কেউ যেন এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।
২) সারসংক্ষেপ : গবেষণা প্রস্তাবনার এ অংশে যে বিষয়ে গবেষণা পরিচালিত হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকবে। এর মধ্যে গবেষণার তাত্ত্বিক বিষয়বস্তু, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, গবেষণাকর্মটি কাদের জন্য পরিচালিত হবে, কী বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে এবং কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকবে।
৩) ভূমিকা : গবেষণার বিষয় সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ বিবরণ থাকবে। গবেষক যে বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করবেন তা কী? কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? এর যৌক্তিকতাইবা কী ? ভূমিকায় এ সকল বিষয়ের সহজবোধ্য সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে।
৪) গবেষণা সমস্যার বিবৃতি : যে বিষয়ের ওপর গবেষণা পরিচালিত হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো গবেষণা সমস্যার বিবৃতি । এখানে কতগুলো প্রশ্ন তুলে ধরা হয় যা বর্তমান গবেষণায় অনুসন্ধান করা হবে ।
৫) ব্যবহৃত প্রত্যয়সমূহের কার্যকরী সংজ্ঞায়ন : গবেষণা প্রস্তাবনার এ অংশে গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন চলক বা প্রত্যয়সমূহের সাধারণ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা প্রদান করতে হবে। প্রত্যয়সমূহ গবেষণাকার্যে কী অর্থে ব্যবহৃত হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান আবশ্যক। একমাত্র সংজ্ঞায়নের মাধ্যমেই গবেষণার প্রত্যয়সমূহ কী অর্থে ব্যবহৃত হবে বা এর ব্যাপ্তি কী হবে তার যথাযথ ধারণা পাওয়া যায়।
৬) সাহিত্য সমীক্ষা : গবেষণার জন্য নির্বাচিত ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যথার্থ ধারণা লাভের জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ, সাময়িকী, প্রতিবেদন, কলাম, পত্রপত্রিকা পাঠ আবশ্যক। এর মাধ্যমে গবেষণাধীন বিষয় সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
এছাড়া গবেষণার বিষয়ে পূর্বে কোনো গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকলে সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বিষয় সম্পর্ক জানা যায় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ইতোপূর্বে গবেষণা পরিচালিত হয়নি তা চিহ্নিত করা হয়।
৭) গবেষণার যৌক্তিকতা : বর্তমাণ গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা কী গবেষণালব্ধ জ্ঞান তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে ও বাস্তবায়নে কী সহায়তা করবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে।
৮) গবেষণার উদ্দেশ্য : গবেষণা প্রকল্পে প্রকৃতপক্ষে কী অনুসন্ধান বা বিশ্লেষণ করা হবে তা এখানে স্স্পুষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। গবেষণা প্রধান বা সাধারণ উদ্দেশ্য ও বিশেষ উদ্দেশ্য কী এখানে ব্যাখ্যা করা হয়।
৯) গবেষণা পদ্ধতি নির্ধারণ : গবেষণা প্রস্তাবনায় গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্য কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে, কেন প্রয়োগ করা হবে তার বর্ণনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নমুনায়ন, তথ্য সংগ্রহ, এবং তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে।
এছাড়াও গবেষণায় প্রস্তাবনায় নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ উল্লেখ থাকে :
ক) প্রস্তাবিত সময়সূচি : গবেষণা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদনের জন্য সময়সূচি তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে গবেষণা সম্পাদনের জন্য পর্যায়ক্রমানুসারে প্রধান প্রধান কাজ। যেমনÑ গবেষণা নকশা প্রণয়ন, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ, গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদির তালিকা তৈরি করে কত সময়ের মধ্যে তা সম্পাদন করা হবে তার সুস্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে।
খ) বাজেট প্রণয়ন : গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য অর্থ একান্ত আবশ্যকীয় বিষয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস্য, উক্ত অর্থ কোন খাতে কত ব্যয় হবে এবং কীভাবে ব্যয় করা হবে তার বিশদ বিবরণ থাকতে হবে।
গ) সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি : গবেষণা বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ, জার্নাল, গবেষণা প্রবন্ধ, পত্রপত্রিকা, রিপোর্ট, ওয়েবসাইট প্রভূতি যা গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এটিই হলো সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি। সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে গ্রন্থপঞ্জি লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন: সরকার, আবদুল হাকিম (২০০০) “ব্যক্তি সমাজকর্ম নির্দেশিকা”, ঢাকা : ঈমা প্রকাশনী।
কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার প্রাথমিক কাজ হলো গবেষণা প্রস্তাবনা প্রস্তুত ও কর্তৃপক্ষের নিকট জমাদান। গবেষণা প্রস্তাবনা সামগ্রিক গবেষণা কার্যক্রমের পূর্বে পরিকল্পনা। যাতে গবেষণার বিষয় বা সমস্যা, গবেষণার উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়। গবেষণা প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করেই গবেষক সামগ্রিক গবেষণাকর্ম পরিচালনা করে থাকেন। গবেষণা প্রস্তাবনায় সাধারণত যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয় তা হলো: ১) গবেষণা শিরোনাম, ২) সারসংক্ষেপ, ৩) ভূমিকা, ৪) গবেষণা সমস্যার বিবৃতি, ৫) প্রত্যয়সমূহের কার্যকর সংজ্ঞায়ন, ৬) সাহিত্য সমীক্ষা, ৭) গবেষণার উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা এবং ৮) গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতি।
সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব (Importance of Social Work Research)
সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করার এক পেশাগত কর্মপ্রক্রিয়া যা তাদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করে তোলে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সম্পর্কিত যথাযথ তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যের আলোকে সমস্যার স্বরূপ নির্ণয়, নির্ণীত সমস্যার সমাধানে যথাযথ পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে পেশাগত সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সমস্যা সম্পর্কিত উপাত্ত সংগ্রহ : সমস্যা সমাজকর্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সমস্যার সমাধানই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী সমাধান ব্যবস্থা প্রদানে সমস্যা সম্পর্কিত তথ্য আহরণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সমস্যা সম্পর্কিত যথাযথ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
২. সামাজিক সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন : সামাজিক সমস্যা বহুমাত্রিক এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এই বহুমাত্রিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সমস্যার বহুবিধ কারণ উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। সমাজকর্ম গবেষণা সমস্যার যথাযথ কারণ উদ্ঘাটন করে সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণে যথাযথ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. সম্পদ নির্ধারণ : সমাজে নানাবিধ সম্পদ বিদ্যমান। এসব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ব্যতীত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। সকল প্রকার বস্তুগত ও অবস্তুগত, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পদ চিহ্নিতকরণ ও আহরণ এবং যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৪. সামাজিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন : সামাজিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে তার সাথে প্রচলিত সম্পদের সামঞ্জস্যবিধানের চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণা যথাযথ চাহিদা নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণে কর্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. সামাজিক নীতি ও আইন প্রণয়নে সহায়তা : সামাজিক নীতি ও আইন হলো আধুনিক সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ ও মানুষের প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক সময় নীতি ও আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণা সামাজিক সমস্যা বা প্রয়োজনের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে যথাযথ নীতি ও আইন প্রণয়নে সহায়তা করে থাকে।
৬. সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ : সমাজকর্ম একটি সমাধানমূলক কর্মপ্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় সমস্যা সমাধানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী পদ্ধতিগুলোর যথাযথ প্রয়োগ এবং পদ্ধতিসমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৭. সমাজকর্মের নতুন নতুন কৌশল ও পদ্ধতি উদ্ভাবন : সমাজ একটি গতিশীল ব্যবস্থা। সমাজের এ গতিশীলতার সাথে সাথে নিত্য নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। এসকল সমস্যার বাস্তবমুখী ও টেকসই সমাধানের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণা সমস্যার ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যকর পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবনে যথাযথ সহায়তা করে থাকে।
৮. সমাজকর্ম সেবার মূল্যায়ন : সমাজকর্ম একটি সেবামূলক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধানে যথাযথ সেবা প্রদান করা হয়। প্রদত্ত এ সেবা ব্যবস্থা সমস্যা সমাধানে কতটা কার্যকর তা মূল্যায়নে সমাজকর্ম গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়াও সমাজকর্ম গবেষণা সমাজকর্মীদের জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপূণ্য বৃদ্ধি, পেশাগত মূল্যাবোধ ও নীতিমালা প্রণয়ন, সামাজিক ঘটনা বা সমস্যার মধ্যে কার্যকরণ সম্পর্ক আবিষ্কার, সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ, সমস্যা সম্পর্কিত ভবিষ্যতবাণীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সূতরাং বলা যায়, সমাজকর্ম গবেষণা পেশাগত সমাজকর্ম অনুশীলনে সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সমাজকর্ম গবেষণা নানাবিধ সামাজিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিশ্লেষণ ও তার সমাধানে প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন করে থাকে। এজন্য সমাজকর্ম গবেষণা সমাজকর্মের পেশাগত অনুশীলনে সহায়ক হিসেবে পরিগণিত।
সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব বিবেচনা করে একে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়, সমস্যার সমাধান ব্যবস্থা প্রদান, প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন, প্রয়োগ ও প্রয়োগের কার্যকারিতা নির্ণয়, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ ও উন্নয়ন সাধনে পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচির মূল্যায়ন, সামাজিক কার্যক্রম, সমাজকর্ম প্রশাসন ব্যবস্থার যথাযথ ভূমিকা পালনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন নানাবিধ ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।