আবেগ বা রোমান্স (What is Romance?)কী?
“আচ্ছা! রোমান্স কি?
ফুলবাড়িগেটে চা খেতে খেতে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম।
বন্ধুও আমার এক কাঠি বেশি সরেস, মৃদু হেসে জবাব দিল, “রোমান্স হচ্ছে তা, যা তোমার মাঝে নেই! ”
আমিও নাছোড়বান্দা। হেঁটে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে যাওয়ার সময় আবার জিজ্ঞেস করলাম, “বল না! রোমান্স কি?”
বন্ধু এবার সিরিয়াস। বিজ্ঞের মত ভাব ধরে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল, “রোমান্স বিষয়টা আসলে আপেক্ষিক!”
বুঝলাম উত্তর দিতে চাচ্ছে না। তবে আমি উত্তর বের করবই।
বললাম, “আপেক্ষিকগুলোই না হয় বলো, শুনে দেখি!”
এবার সে পুরোপুরি সিরিয়াস। আলো ঝলমলে ক্যাম্পাসের দিকে তাকিয়ে হালকা স্বরে বলা শুরু করল-
“রোমান্সকে কেন আপেক্ষিক বলেছি জানো? সমাজের হাই প্রোফাইল মানুষগুলোর কথা চিন্তা করো। তাদের কাছে রোমান্স মানে- ফাইভ স্টার হোটেলে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার শেষে ফেইসবুকে ছবিসহ চেক ইন দেয়া। দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো। এনিভারসারিতে হাজবেন্ডের গিফটের দাম দিয়ে ধনী দুলালী তার হাজবেন্ডের রোমান্স পরিমাপ করে। আমার ধারণা- এই শ্রেণীর মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশী রোমান্সবিহীন, ভালবাসাবিহীন।
তুচ্ছ কারণে তাদের সম্পর্কগুলো ছুটে যায় সম্ভবত এই কারণেই। মানুষের সামনে সীমাহীনভাবে ভালো থাকার অভিনয় করা মানুষগুলো যেন নিজেরাই জানিয়ে দেয়, তারা ভালো নেই। কারণ, ভালো থাকলে শো-অফ করার প্রয়োজন পড়ে না।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর তো এতো সামর্থ্য নেই। তাই বলে রোমান্স থেমে থাকে নাকি? কেবল উন্মাদরাই টাকা দিয়ে রোমান্স পরিমাপ করে।
ধরো, রাতে অফিস থেকে ফেরত আসার সময় তুমি বেলী ফুলের একটা মালা স্ত্রীর জন্য নিয়ে গেলে। তারপর তার লম্বা চুলে খোঁপা করে বেঁধে দিলে। আমার চোখে এটাই রোমান্স।
কিংবা ধরো, তোমার স্ত্রী কোথাও রাতে জব করছে। শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে তুমি ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে তার জন্য নিয়ে গেলে। তোমার স্ত্রী প্রচণ্ড রাগ করে বলল, “পাগল নাকি তুমি! এই শীতে বের হয়ে ঠাণ্ডা লাগাবে নাকি।”
তারপর অফিসের এক কোণে বসে দুইজন মজা করে পিঠা খেলে। তোমার স্ত্রী তোমাকে বকা দিতে দিতে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করল। আর তুমি সব দেখেও না দেখার ভান করলে। হয়তো এটাই রোমান্স ।
রোমান্স হচ্ছে, যখন বিয়ের পর তোমার সাময়িক মোহটা কেটে যায়, তাকে আর আগের মত ভালো লাগে না, কিন্তু তারপরেও তুমি তাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসার চেষ্টা করো। রোমান্স হচ্ছে যখন মেয়েটা মেনে নিতে শিখে, জীবনটা রূপকথা নয়, সে কোন রাজকন্যা নয়, আর তুমিও কোন রাজপুত্র নও। কিন্তু তারপরেও কিছু গল্পের সৃষ্টি হয় যেগুলো রূপকথাকেও হার মানায়।
যখন তুমি ব্যায়ামের ভাব দেখিয়ে দশ টাকা রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে অনেক দিন পর বউকে কিছু টাকা গিফট দিয়ে বলো, “টাকাগুলো তোমাকে দিলাম। ইচ্ছামত খরচ করো।” আর তারপর মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখ। এটাকে কি রোমান্স বলা যায়?
আমার কাছে রোমান্স হচ্ছে উজ্জ্বল জোছনায় দুইজন একসাথে চাঁদ দেখা আর তারপর তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলা,
“কে বলে শারদ শিশি এ মুখের তুলা!
পদনখে পড়ে আছে তার কতগুলো।”
কিংবা রোমান্স হতে পারে, জীবনে এতো সুন্দর কিছু না ঘটলেও জীবনে একসাথে পাশাপাশি চলতে পারা, অতি সাধারণ একজনকে অসাধারণভাবে ভালোবাসতে পারা।
আর আসল রোমান্স হচ্ছে আমাদের রাসূল ﷺ যখন আয়েশা (রাঃ) পাত্রের যে দিক দিয়ে পানি পান করতেন, তিনিও ঠিক একই দিক থেকে পানি পান করতেন। রাতের বেলায় দুইজন একসাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন আর তিনি ইচ্ছা করে হেরে যেতেন।
যখন রাসূল ﷺ খাদিজা(রাঃ) এর স্মরণে তার বান্ধবীদের মাংস উপহার পাঠাতেন। অনেকদিন পর তার হার দেখে কেঁদে ফেলতেন। গভীর আবেগে বলতেন,
“আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ্ আমাকে তার চেয়ে উত্তম বদলা দেননি। যখন সবাই আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে, সে আমাকে সত্যবাদী বলেছে।”
আমি এতোক্ষণ কথাগুলো শুনছিলাম। কোথাও যেন পড়েছিলাম, রিলেশনশীপ নিয়ে সবচেয়ে ভালো এডভাইস নাকি সিঙ্গেলরাই দেয়। কথাটা সম্ভবত সত্য।
না হয় বিয়ের পর রোমান্স নিয়ে এতো কথা কেন এমন ছেলে বলবে, যে এখনো বিয়েই করেনি??
বক্তাঃ শিহাব আহমেদ তুহিন; শ্রোতা ও লেখকঃ নাফিস শাহরিয়ার ভাই; সময়ঃ ৫ ডিসেম্বর ২০১৬