গবেষণায় ফ্রিল্যান্সিং ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেইস স্টাডি
গবেষণা শিখে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন এবং এর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ গুলো কি কি? এই বিষয়ে একটু বলার চেষ্টা করছি-
সহজ কথা হলো- যে সমস্ত কাজে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আছে; সেই কাজগুলো অর্থের বিনিময়ে আপনি আরেকজনকে করে দেবেন। গবেষণায় যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন, দুই ধরনের কাজ পাবেন । একাডেমিক কাজ এবং নন-একাডেমিক কাজ।
বিভিন্ন জনের অ্যাসাইনমেন্ট, থিসিস, ও কোর্সওয়ার্ক ইত্যাদি একাডেমিক কাজগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । ইথিক্যাল ইস্যুর কারণে আপনি কাউকে তার একাডেমিক কাজ করে দিতে পারবেন না । মনে করুন , কেউ একজন এমফিল বা পিএইচডি করেছে । সামর্থ্য থাকলে আপনি ও তার থিসিস সম্পন্ন করে দিতে পারবেন না। এটা যার একাডেমিক কাজ তাকেই করতে হবে ।
ট্রানসলেশন,ট্রানস্ক্রিপশন,প্রুফরিডিং,কনটেন্ট তৈরি ,ডাটা কালেকশন ইত্যাদি কাজগুলো একাডেমিক হলেও সেগুলো করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে যার কাজ করা হচ্ছে,তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার কাজকে একনলেজ করতে হবে,এটাই নিয়ম ।
$ads={1}
তাহলে একজন ফ্রিল্যান্সার গবেষণার কোন কাজগুলো করবে?
গবেষণার যত ধরনের কাজ আছে যেগুলোর সাথে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষের অ্যাক্যাডেমিক কোয়ালিফিকেশন এর সম্পর্ক নেই , সেই কাজগুলো আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ হিসেবে করতে পারবেন। প্রতিবছর সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো গবেষকদেরকে বিভিন্ন গবেষণা প্রোজেক্টের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকেন । সেই প্রজেক্টগুলোতে ভার্চুয়াল ডাটা এনালিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন । মার্কেটপ্লেসে দেখা যায়, শত শত কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে গবেষণা করে ,সেজন্য লোক হায়ার করে; সেই কাজগুলো করতে পারেন।
আমার ছোট অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, গবেষণা প্রস্তাবনা লেখা থেকে শুরু করে গবেষণার সকল কাজের প্রচুর ডিমান্ড থাকলেও ; এই কাজগুলো করে দেওয়ার মত ভালো Seller খুব বেশি নেই। এই কাজগুলো চাইলে ফাইবার আপওয়ার্ক ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে করতে পারেন অথবা মার্কেটপ্লেস এর বাহিরে করতে পারেন।
আমি ফাইবার মার্কেটপ্লেসে কাজ করা শুরু করেছিলাম এবং আলহামদুলিল্লাহ অল্প সময়ে অনেক সফলতা পেয়েছিলাম । যেগুলো আমি ওই সময় ফেসবুকেও আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি । তবে পার্মানেন্ট ক্যারিয়ার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে কাজ করার কিছু ঝুঁকি রয়েছে , এজন্যই আমি এখন মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ করি ।
মার্কেটপ্লেস এ যারা কাজ দেয় তারা নিজেরাও গবেষণা সম্পর্কে দেখা যায় , খুব বেশি কিছু জানেনা ।ফলে একটি কাজ সম্পন্ন করে দেওয়ার মত স্যাম্পল এবং সাপোটিভ ডকুমেন্ট সময় তারা দিতে পারে না ।
একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি-
গতবছর গবেষণা রিপোর্ট তৈরি করার বড় বাজেটের একটি কাজ পাই । অনেক ব্যস্ত থাকার পরেও বাজেট বেশি থাকার কারণে এই কাজটি নিয়ে নেই । কাজ জমা দেওয়ার ঠিক দু'দিন আগে উনারা টপিক চেঞ্জ করে নিতে বলেন । এজন্য উনারা দুঃখ প্রকাশ করেন । তবুও শেষ মুহূর্তে কাজটি মোটামুটি ভালোভাবে সম্পন্ন করে জমা দেই।
এরপর ভদ্রলোক বলেন, রিপোর্ট যেহেতু পুরাপুরি জমা দেইনি , উনাকে যেন অর্ধেক অর্থ ফেরত দেই অথবা অর্ধেক অর্থের সমপরিমাণ অন্য একটি কাজ করে দেই। আমি দ্বিতীয় প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই কিন্তু দুদিন পরে হঠাৎ করেই দেখি যে, ওই লোক ফাইবারের কাছে আবেদন করে কাজের পুরো টাকা রিফান্ড নিয়ে নেন । এরপর ফাইবার কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার মেইল করেও এখন পর্যন্ত সেই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ।
গবেষণার একইকাজ করার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন- লিটারেচার রিভিউ বেশ কয়েকভাবে করা যায় । ট্রানস্ক্রিপশন করার অন্তত তিনটি পদ্ধতি আছে। সমস্যা হচ্ছে আপনি যার কাছ থেকে কাজ নিয়েছেন তিনি যদি ঠিকমতো বুঝিয়ে না দেন ,তাহলে গবেষণার মতও বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
মার্কেটপ্লেসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে অনেক অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। একইকাজ বাংলাদেশে করলে যেখানে ৫০০০ টাকা ; সেই একইকাজ মার্কেটপ্লেসে করলে ৩০০ ডলার পাওয়া সম্ভব ।
যাই হোক সবকিছু ভালোই চলতেছিলো, এরপর কোন একটা কারণে ফাইবারে আইডি ডিজেবল হয়ে গিয়েছিলো । তখন থেকে মার্কেটপ্লেসে কাজ করা বন্ধ করে দেই ।
এখন মূলত মার্কেটপ্লেসের বাহিরে কাজ করছি। আগের বায়াররা তাদের বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে ,রিসার্চ প্রপোজাল এবং ডাটা এনালাইসিস সংক্রান্ত অনেক কাজ পাওয়া যায় । মার্কেটপ্লেস এর বাহিরে কাজ করার বেলায় ভুলেও কোন প্রতারকের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। অনেকেই আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবে এরপর উধাও হয়ে যাবে। পাকিস্তানি এক মহিলার কাছে আমার টাকা এখনো আটকে আছে ।
গবেষণায় ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় । একটা কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ করি , সেটা অর্থ উপার্জনের চাইতেও চাইতেও বেশি কিছু । আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে গবেষণার বেশ কিছু সফটওয়্যার সাথে পরিচিত হয়েছি ।
যারা নতুন, তাদের কে উপদেশ দেওয়ার যোগ্যতা নাই;তবে পরামর্শ দিতে পারি-
প্রথমত গবেষণা শিখতে হবে মনের আনন্দে । এত দীর্ঘমেয়াদী একটা বিষয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেশিদূর এগোতে পারবেন না । গবেষণার সার্বিক বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে । শুরুতেই অর্থ উপার্জনের ফাঁদে পা দেওয়া যাবেনা । এমনকি আমি নিজেও মনে করি ,আমি আরো পরিপক্ক হয়ে মার্কেটপ্লেসে কাজ করলে আরও ভালো করতে পারতাম।কাজের ক্ষেত্রে , ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানী বায়ারদেরকে এড়িয়ে চলা যেতে পারে। ইউটিউব ,ইউডেমি,গুগোল; এগুলোকে প্রপারলি ব্যবহার করতে হবে । যে কাজটা শিখতে চান;সে কাজের পিছনে একদম লেগে থাকেন।আপনি যখন ডেডিকেটেডলি একটা কাজ শিখবেন;তখন অন্যরাও আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। ।
লেখকঃ মোরশেদ আলম, আইইআর, জবি ও ফাউন্ডার, রিসার্চ হেল্প বাংলাদেশ।