গবেষণা কী ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা?

গবেষণা কি এবং কেন?

গবেষণা (Research) নামের শব্দটি আমাদের অনেকের কাছেই অনেক বেশি পরিচিত। গবেষণাকে আমরা এক এক জন এক একভাবে ব্যাখ্যা করে থাকি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় প্রকৃত অর্থে গবেষণা কি জিনিস। সাধারণ অর্থে, গবেষণা হলো কোনো বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানা। এই বিষয়টিকে ইন-ডেপ্থ স্টাডি (in-depth study) কিংবা ইনটেনসিভ স্টাডিও (intensive study) বলে থাকে অনেকে।

গবেষণাকে ব্যাপক অর্থে বুঝতে হলে গবেষণার দুটি দিক সম্পর্কে জানতে হবে। প্রথমেই জানতে হবে গবেষণার প্রকারভেদ সম্পর্কে। পৃথিবীতে যত ধরণের গবেষণা হয় তাদের সবগুলোকে মোটামুটি দুটি প্রধান ক্যাটেগরিতে আমরা ভাগ করতে পারি। প্রথমটি হচ্ছে একাডেমিক গবেষণা (academic research) এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে কর্পোরেট গবেষণা (corporate research)।

অনেকের কাছে আবার এ দুটি ভাগকে একই মনে হতে পারে। কিন্তু দুটির মধ্যে সুক্ষ ব্যাবধান রয়েছে। একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি অতি জনপ্রিয় কথা হচ্ছে জ্ঞানের জগতে ভ্যালু যোগ করা। এছাড়াও এ জাতীয় গবেষণার আরো একটি দিক হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালো করে জানা।

কর্পোরেট গবেষণার ক্ষেত্রে ভ্যালু যোগ করার বিষয়টি তেমন করে থাকে না। কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালো করে জানার বিষয়টি এক্ষেত্রে সর্ব ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকে। আমরা ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে যে গবেষণাগুলো করে থাকি সেগুলো প্রায়ই একাডেমিক গবেষণা। আর কর্পোরেট জগতে যে ধরণের গবেষণা আমরা দেখে থাকি সেগুলো হচ্ছে কর্পোরেট গবেষণা। তবে উন্নত দেশগুলোতে আজকাল ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন নামে একটি বিষয় অনেক জনপ্রিয়। এ ধরণের কোলাবোরেশনের মাধ্যমে আজকাল অনেক ধরণের কর্পোরেট গবেষণাই হচ্ছে একাডেমিক সেটিংসে।

আমাদের দেশে ব্যাচেলর পর্যায়ে এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাস্টার্স পর্যায়েও গবেষণার তেমন একটা সুযোগ নেই। কিন্তু বাইরের অনেকগুলো দেশেই ব্যাচেলর পর্যায় থেকেই গবেষণার হাতেখড়ি শুরু হয়। গবেষণা শব্দটিকে অনেকেই অনেক রকমভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তবে সবার আলোচনার মধ্যে তিনটি বিষয় খুব ভালো করে আমরা দেখতে পাই -

$ads={2}

গবেষণা আমাদের কোনো বিষয় সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে সাহায্য করে।

গবেষণার ক্ষেত্রে অজানাকে জানার চেষ্টা করা হয়। অনেক কিছুই আছে যার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান পরিপূর্ণ নয়। আমাদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হলে গবেষণা করতে হবে। যেমন - আমাদের চারপাশে অনেক ধরণের সমস্যা রয়েছে। বেকার সমস্যা তাদের মধ্যে একটি। এখন আপনি যদি বেকার সমস্যা সম্পর্কে আরো ভালো জানতে চান তবে আপনাদের গবেষণা করতে হবে। এই সমস্যার মূলে কি কি বিষয় জড়িত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। একটি সমস্যা সম্পর্কে পূর্ণরূপে জানলেই আমরা সমস্যাটি সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে পারবো।

$ads={2}

জ্ঞানের জগতে ভ্যালু অ্যাড করতে সাহায্য করতে গবেষণা।

গবেষণার দ্বিতীয় দিকটি হলো এটি আমাদের জ্ঞানের জগতে ভ্যালু অ্যাড করতে সাহায্য করে। মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের গবেষণার ক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাড করার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গবেষণাটি আপনার রিসার্চ প্যানেলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিদর্শন হিসেবে কাজ করে।

একটি বিষয় নিয়ে অনেকেই গবেষণা করে থাকেন। কিন্তু প্রতিটি বিষয়েরই রয়েছে অনেকগুলো দিক। একটি গবেষণার মাধ্যমে প্রতিটি দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। যার কারণে গবেষণার ক্ষেত্রে বহু দিকের মধ্যে আমরা কেবল অল্প কিছু দিকে নিয়েই দেখে থাকি। প্রতিটি দিক সম্পর্কে গবেষণা গবেষণার জগত নতুন নতুন ভ্যালু অ্যাড করে।

যেমন - কার্ডিয়াক এট্যাকের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বেশিরভাগ কারণগুলো সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু আপনি যদি হটাৎ করে গবেষণা করে বের করেন যে কার্ডিয়াক এট্যাকের নতুন কোনো কারণ রয়েছে এবং সেই কারণটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এক্ষেত্রে আপনি কার্ডিয়াক এট্যাকের গবেষণার জগতে একটি নতুন ভ্যালু অ্যাড করলেন।

$ads={1}

সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবেও কাজ করে গবেষণা।

একটি সমস্যা সমাধানের অনেকগুলো দিক থাকতে পারে। কিন্তু সবগুলো পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করলেই সফল হওয়া যায় না। অনেকগুলো বিকল্পের মধ্যে সর্বোত্তম বিকল্পটি খুঁজে বের করতে হয়। এক্ষেত্রে সাহায্য করে গবেষণা।

গবেষণার মাধ্যমে আমরা একটি বিষয় সমাধানের অনেকগুলো দিক নিয়ে আলোচনাও করতে পারি। আবার সেই আলোচনার মাধ্যমে সর্বোত্তম সমাধান পদ্ধতিটি আমরা বাছাই করতে পারি।

গবেষণা আমাদের অনেক কাজে সাহায্য করে থাকে। আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলো আমরা গবেষণার ফলে পেয়েছি। মোবাইলফোন, কম্পিউটার, আজকের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সবগুলো আমরা ভোগ করছি গবেষণার কারণে।

গবেষণার ক্ষেত্রে আজকাল তাই বাস্তব জীবনে ব্যবহারের বিষয়টির উপর অনেক অনেক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একটা সময়ে এই গুরুত্ব কেবল বিজ্ঞান বিশেষ করে অ্যাপ্লায়েড সাইন্স, ন্যাচারাল সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় গবেষণার গুরুত্ব আজ সমাজ বিজ্ঞানের অন্য বিষয়গুলো যেমন ব্যবসায়, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেগুলোতেও বেড়েছে। আজকাল গবেষণাও হচ্ছে আবার পাশাপাশি সেই গবেষণার ফলকে বাস্তবে কাজে লাগানোর উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আজ ইনকিউবেটর হাব যার মাধ্যমে গবেষণার ফলগুলো থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস তৈরির কাজ করা হচ্ছে।

গবেষণা আজ সার্বজনীন একটি বিষয়।কেবল একটি কিংবা গুটি কয়েক বিষয়ের মধ্যে আজ গবেষণা সীমিত নয় বরং গবেষণার ব্যাপ্তি আজ বহু দূরে। গবেষণার জগৎ সম্পর্কে আমাদের তাই জানতে হবে। গবেষণা করার জন্য আমাদের আগ্রহী হতে হবে। সর্বোপরি গবেষণার একটি কালচার তৈরী করতে হবে।

<Financial Engineer > Eccentric Economist > Futurist>
বিবিএ (ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা) ১৪ তম ব্যাচ
এমবিএ (ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া)
মাস্টার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, জাপান)
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)
(Acquiring knowledge does not have a full-stop, rather it always has a comma - Ahad)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url