প্রাইমারি ভাইভা: একটি সফল ভাইবা ও তার কিছু দিকনির্দেশনা

প্রথমেই আবার ও অভিনন্দন যারা প্রাইমারির প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

চাকরিপ্রাপ্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চূড়ান্ত পর্ব ভাইভা। ভাইভা ব্যাপারটা প্রতিটি চাকরি প্রার্থীর জীবনেই বিভীষিকা হিসেবে দেখা দেয়। যদিও বিষয়টা এতটা জটিল কিংবা কঠিন নয়। একটু সচেতন হলে সহজেই ভাইভা বোর্ডের কঠিন দরজা পেরিয়ে আসা যায়। কীভাবে? অবাক হলেও সত্যি; একজন পরীক্ষক ভাইভা বোর্ডে আপনার জানার পরিধি পরীক্ষা করার চেয়ে যেসব বিষয়ের দিকে নজর দেন সেগুলো হচ্ছে-

আপনি কতটা বিনয়ী, কতটা আত্মবিশ্বাসী এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি কতটা সামলে নিতে পারছেন। এই বিষয়গুলোতে আপনার পারফরম্যান্স ভালো হলে; ভাইভা বোর্ডে ভালো করতে পারবেন এটা সুনিশ্চিত। কয়েকটি বিষয় ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে লক্ষ্য করা উচিত্ আর এগুলো হলো- অবশ্যই নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে। পোশাক-আশাক, সাজসজ্জা, কাগজপত্র, পড়াশোনা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। ছেলেরা হালকা এক রঙের ফর্মাল শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে কালো রঙের ফর্মাল জুতা। মাথার চুল সুন্দর করে ব্রাশ করবেন। সব পোশাকই স্বাভাবিক হতে হবে। হালকা পারফিউম ব্যবহার করে যেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি মেয়েরা হালকা রঙের শাড়ি পরেন। শাড়ি না পরে সালোয়ার-কামিজও পরা যায়। ওড়না পিনআপ করা ভালো। কড়া মেকআপ অবশ্যই নেতিবাচক হয়ে ধরা দিতে পারে! কমপক্ষে আধ ঘণ্টা আগে ভাইভা বোর্ডে হাজির হতে হবে। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাসী, হাসিখুশি ভাব নিজের চেহারায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। ভাইবা বোর্ডে ঢোকার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আপনার ডাক পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফাইলে আছে। সেটা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের জন্য এগিয়ে যান। দরজায় গিয়ে ঢোকার অনুমতি চান। অনুমতি পেলে প্রবেশ করুন এবং সালাম দিন। চেহারায় থাকবে আত্মবিশ্বাসী ভাব। মুখে হালকা হাসি। তবে বোকা বোকা হাসি অবশ্যই নয়।

অনুমতি পেলে বসুন। বসার সময় চেয়ার টানাটানি করা যাবে না। হাঁটার সময় কিছুতেই যেন শব্দ না হয়। হাতের ফাইলটি সামনে রাখুন। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসবেন না। পিঠ সোজা করে, হাত দুটো পায়ের ওপরে আলতো করে রেখে বসবেন। কিছুতেই মুখ গোমড়া করে রাখবেন না। হাসিখুশি-প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করুন। আপনি বসার পরেই আপনাকে প্রশ্ন করা হবে। সাধারণত শুরুতে টুকটাক প্রশ্ন করা হয়। যেমন- আজকের পত্রিকার শিরোনাম, খেলার খবর, বাংলা সনের কোন মাস, কোন তারিখ ইত্যাদি।

তারপর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন, আপনার নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন এবং সবশেষে আপনাকে করা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্নগুলো। হয়তো হঠাত্ বলে উঠবে- আচ্ছা, আপনার শার্টে ক’টা বোতাম আছে বলতে পারবেন? তখন কিন্তু শার্টের দিকে তাকানো যাবে না। না তাকিয়েই উত্তর দিতে হবে। প্রশ্ন না পারলে আমতা-আমতা বা মনে পড়ছে না টাইপ ভাব ধরা যাবে না। সরাসরি বলে দিন যে, স্যার আমি বিষয়টা জানি না। ভাইভা বোর্ডের সব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং প্রশ্ন শুনে ঘাবড়াবেন না বা বিচলিত হবেন না।

যখন কারও প্রশ্নের জবাব দেবেন, বডি ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করবেন না। অর্থাত্ হাত-পা নেড়ে কথা বলবেন না। আবার শরীর শক্ত করে বসেও থাকবেন না। শরীর স্বাভাবিক রেখে জবাব দিন।

এক সময় আপনাকে প্রশ্ন করা শেষ হবে। মানে আপনার ভাইভা শেষ। সামনে থাকা আপনার কাগজপত্র ভাঁজ করে ফাইলে নিন ও উঠে দাঁড়ান। তারপর সালাম দিন এবং দু'পা পেছনে এসে ঘুরে বের হন ভাইভার কক্ষ থেকে।

এবার আসি ভাইবার প্রস্তুতি বিষয়ে। কারণ অনেকেই এ ব্যাপারে রিকোয়েস্ট করেছেন পোস্ট দেওয়ার জন্য। সবার আগে যে জিনিসটি বলতে পারি তা হলো আপনি যদি প্রস্তুতি নিয়ে ভাইবাতে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে ভুল করছেন।কারণ কেউই সবজান্তা হতে পারে না।ভাইবাতে কোন দিকে কিভাবে আপনাকে প্রশ্ন করা শুরু করবে তার কোন ইয়ত্তা নেই।একটি সফল ভাইবা দিতে হলে সর্বপ্রথমে আপনাকে উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো শতভাগ অনুসরণ করতে হবে।তাহলেই আপনি ৮০ ভাগ সফল। তারপর ও ভাইবার জন্য একান্তই যে গুলো জানা জরুরী তার একটি তালিকা নিচে দিচ্ছি।

১।আপনার নিজের নামের সাথে যদি কোন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম থেকে থাকে তাহলে তার সম্পর্কে ধারণা রাখা।

২।আপনার নিজের জেলা এবং উপজেলার বিখ্যাত স্থান,দর্শনীয় স্থান,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থান,বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব,বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা একদম নখদর্পণে থাকা।

৩।আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন সে বিষয়ের মৌলিক দিকগুলো জানা একান্তই জরুরী।এক্ষেত্রে আপনার সর্বশেষ পঠিত বিষয়ের উপর থেকেই প্রশ্ন করা হবে।

৪।দেশে ও সারা বিশ্বের চলমান ঘটনা সমৃহের উপর নজর রাখা।এক্ষেত্রে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে।

৫। বর্তমান মন্ত্রীসভার সদস্য দের নাম জানা।

৬।নিজের নির্বাচনী এলাকার সাংসদ এবং বিখ্যাত কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকলে তার সম্পর্কে জানা।

৭।মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত নখদর্পণে থাকতে হবে। বিশেষ করে ধাপগুলো যেমন ১৯৪৭,১৯৫২,১৯৫৪,১৯৫৮,১৯৬২,১৯৬৬,১৯৬৮,১৯৬৯,১৯৭০,১৯৭১।

৮।মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্র ও বাহিনীর প্রধানসহ সেক্টর কমান্ডারদের নাম ও কিছু তথ্য ক্ষেত্রবিশেষে।

৯।বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানা থাকতেই হবে।

১০।নিজের এলাকার বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও সাধক সম্পর্কে।

১১।ইংরেজির জন্য tense জানা জরুরী।কারণ ভাইবা বোর্ডে অনেক সময়

অনুবাদ করার কথা বলে।

১২।গণিতের জন্য প্রাথমিক চার নিয়ম ভাল করে জানা থাকতে হবে।বাংলার জন্য ব্যকরণ অংশ ও দেশ বরেণ্য কবি,সাহিত্যিক।

১৩।Voice ও Narration জানা থাকতে হবে।

১৪।জ্যামিতির বিভিন্ন সংজ্ঞা।

১৫।সাম্প্রতিক খেলাধুলা।

১৬।একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও গুণাবলী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

১৭।প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট ও Nape সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই।

তালিকা করলে আরো অনেক কিছুই করা যেতে পারে।আপনারা নিজেরা ও এমন একটি তালিকা তৈরি করে ভাইবা প্রস্তুতিকে আরো শাণিত করতে পারেন।

শিখার ও কোন শেষ নাই...জানার ও কোন শেষ নাই।উপরোক্ত টপিকগুলো থেকে যে প্রশ্ন করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।তবে উক্ত টপিক গুলো আপনার ভিতরের আত্নবিশ্বাস তৈরি করবে।যার প্রভাবে আপনার ভাইবা পরীক্ষা ও ভাল হবে।ইনশাআল্লাহ

সবশেষে আবার ও সবার প্রতি রইল শুভ কামনা।ধন্যবাদ সবাইকে।

লেখকঃ সোহাগ তালুকদার, সহকারী শিক্ষক, ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাখাই,হবিগঞ্জ।

------------------------------------------------------------------------

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০ এর লিখিত শেষ হয়ে ভাইভার অপেক্ষা। ভাইভা নিয়ে ঢাকা পিটিআইএর সুপারিনটেনডেন্ট মহোদয়ের গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি নিয়োগ প্রার্থীদের জন্য বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।

------------------------------------------------------------------------

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা দ্রুতই শুরু হবে।

অনেকেই এই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন যদি আমি যোগাযোগ না করি তাহলে মনে হয় আমার  চাকরি হবেনা। 

কিন্তু আপনি কী ভেবে দেখেছেন মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কত? মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০। এর মধ্যে ১০ হচ্ছে  সনদের জন্য ।  আর বাকি  ১০ হচ্ছে ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ।

তাহলে এই ১০ এর মধ্যে একজন সর্বোচ্চ ৮ পেতে পারে এবং একজন সর্বনিম্ন ৪ পেতে পারে । তাহলে একজন থেকে অন্যজনের ব্যবধান মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ হতে পারে ৪ ।

যদি কেউ লিখিত পরীক্ষায় একজন থেকে অন্যজনের ৫ থেকে ৬ নম্বর বেশি থাকে তাহলে যিনি নিচের দিকে আছেন তার চাকরি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বললেই চলে ।

মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকারীদের নিকট লিখিত পরীক্ষার নম্বর থাকে না । সুতরাং মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকারীরা জানতেই পারে না লিখিত পরীক্ষায় কে কত নম্বর  পেয়েছে এবং কত নম্বর পেলে তার চাকরি হতে পারে । 

তাছাড়া এবছর নতুন সিস্টেমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন যেখানে প্রশ্ন আউট এর কোনো সুযোগ ছিল না । বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে বিভিন্ন সংস্থা আটক করেছে এবং শাস্তি দিয়েছেন। 

প্রথম ধাপের পরীক্ষা ২০ এপ্রিল ২০২২ , দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা  ২০ মে ২০২২ এবং  শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩ জুন/২০২২ ।  

সুতরাং লিখিত পরীক্ষায় যেসব পরীক্ষার্থী পাস করেছেন বা সামনে করবেন তাদের জন্য অনুরোধ তদবিরের পিছনে না ঘুরে লেখাপড়া করলেই এবং লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর থাকলে আপনার চাকরি কেউ ঠেকাতে পারবেনা ।

নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।  আপনি ইতোমধ্যে ৮০ মার্কের পরীক্ষা এবং ১০ মার্কের সনদ অর্থাৎ ৯০ মার্কের পরীক্ষা দিয়েছেন । ফলে এই ৯০ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আপনার চাকরি হবে কি হবে না ।

আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং ডিজি মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা যদি কেউ মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোন ধরনের লেনদেনের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিবেন।

সকলের মৌখিক পরীক্ষা সুন্দর হোক এই কামনা করছি।

ক্রেডিটঃ মোঃ কামরুজ্জামান স্যার। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url