ঢাকা কলেজের বিবিএ কোর্স ছেড়ে ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ জার্নি

আলহামদুলিল্লাহ! "নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।"

২০২০ সালের ২০ মার্চ ঢাকা থেকে যখন শেষ বাসে করে বাড়ি ফিরে আসতেছি, আমি তখনও কল্পনা করি নাই সেই যাত্রা আমাকে এখানে নিয়ে আসবে। আসলে মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়ো।



বাড়ি এসে তখন কোনও কাজ ছিল না, আবার ফোনও ছিল না। এরইমধ্যে একদিন ফোন কেনার সিন্ধান্ত নিলাম যদিও আমার তেমন কোনও সামর্থ্য ছিল না। তবে মাকফুরুল এবং সজলের সাপোর্টের কারণে সেটা যেভাবেই হোক সম্ভব হয়ে গেল। সত্যি বলতে, এই দুইটা মানুষের কারণেই আমি এখনও পর্যন্ত অনেক কিছু করতে পারি। যাইহোক, সেই থেকে আমার মিশন শুরু হয়ে গেল।

কোন দেশে কী স্কলারশিপ আছে এগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলাম। কাজটা আমার জন্য মোটামুটি সহজ ছিল কারণ অনেক ছোটো থেকে আমার এগুলো নিয়ে একটা ধারণা ছিল। কিন্তু সমস্যা যেটা হলো সেটা হচ্ছে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ। কারণ টাকা দিয়ে পড়া তো কোনোভাবেই সম্ভব না। এরপর আবার শুরু করে দিলাম কোন দেশে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে পড়া যায়। তখন ফেইসবুকে অনেক গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম৷ তারপর অনেক যাচাই-বাছাই করে দেখলাম চায়না আমার জন্য সবচেয়ে ভালো অপশান। এবার শুধু চায়না নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। কিন্তু বিপত্তিটা হলো যার সাথে কথা বলি সে-ই আমাকে নতুন কোনও একটা ইনফরমেশন দেয়। একজন একটা বলে তো আরেকজন আরেকটা বলে, কেউ বলে এটা ঠিক তো আরেকজন বলে ঐটা ঠিক। এভাবেই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস চলে গেল মানে আমাকে ২০২১ সালের ইনটেকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তার মাঝে আমি মান্দারিন শেখা শুরু করে দিলাম। মোটামুটি কয়েক মাস পুরোদমে প্রাকটিসের ফলে বেসিক অনেক কিছুই শিখে গেলাম। আমি যখন সিএসসি স্কলারশিপ এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এর মধ্যে বুঝে গেলাম চায়নিজ মিডিয়ামের পড়া আমার জন্য দুর্বিষহ একটা ব্যাপার।


তখন থেকে আবার চায়নিজ বাদ দিয়ে IELTS এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। সেখান থেকে আমার পরিচয় হয় রাশেদ ভাইয়ের সাথে যেটা ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এদিকে ২০২১ সালের কয়েকটা মাস চলে গেছে এবং এরই মাঝ দিয়ে আকষ্মিকভাবে আমার পরিচয় হয় রায়হান ভাইয়ের সাথে। উনার সাথে কীভাবে কথা হয়েছিল জানি না, তবে আমার স্কলারশিপ পাওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান উনার।

এতোদিন কাজগুলো আমি নিজে নিজে করতেছিলাম কিন্তু এবার আমার ফ্যামিলির বাইরে কয়েকজনকে জানালাম কারণ সামান্য একটা সাহায্যের দরকার ছিল। কিন্তু সাহায্য তো দূরের কথা উল্টো আমাদের কাছের সেইসব মানুষের থেকে হতাশা নিয়ে ডিমোটিভেটেড হয়ে ফিরে আসলাম। এভাবেই আমার ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ইনটেকের অ্যাপ্লিকেশনটাও করা হলো না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি কারণ ততদিনে আমার ঢাকা কলেজের সব পাঠ চুকানো শেষ। এবার আমি ঠিক করলাম ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর ইনটেকে যেমনেই হোক যাবো। সেই টার্গেটে কাজ শুরু করলাম এবং শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে Yangzhou University থেকে International Business নিয়ে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সিকিউর করলাম।

আর এই স্বপ্ন পূরণে আমাকে সবচেয়ে বেশি যে-ই মানুষটি সাপোর্ট করেছেন বা করে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে বড়ো ভাইয়া। আসলে ভাইয়াকে কোনওভাবে সংজ্ঞায়িত করা পসিবল না। আমার এই জীবনে দেখা একমাত্র রিয়েল লাইফ হিরো যাকে অনায়াসে আইডল মানা যায়। অন্য একদিন ভাইয়াকে নিয়ে অনেক কিছু লেখা যাবে। আজকে শুধুমাত্র আমার অ্যাডমিশন জার্নি নিয়ে লিখলাম কিন্তু এগুলার বাইরে আরও অনেক কাজ করেছি বা অনেক কিছু শিখেছি যেগুলো আমি আমার পরবর্তী জীবনে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবো। সে-সব নিয়ে অন্য একদিন কথা হবে।

আমাকে যারা সর্বাত্মক কোনও না কোনওভাবে সাহায্য করেছিলেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর যারা এখনও সমালোচনা করতেছেন তাদেরকেও স্বাগত। আমার জন্য দোয়া করবেন এবং সবার জন্য রইলো শুভকামনা।

© Meer Eikram 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url